গাজায় যুদ্ধ বিরতিতে কি হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল সংঘর্ষ বাড়বে?

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে। আর ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সংঘর্ষের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত বুধবার (১২ জুন) উত্তর ইসরায়েলে সীমান্তজুড়ে ২০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট নিক্ষেপ করেছে হিজবুল্লাহ। এর আগের দিন হিজবুল্লাহ কমান্ডার তালেব আবদুল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজায় যুদ্ধবিরতি কী তাহলে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনা ডেকে আনছে? কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

গাজা যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের সামরিক ফোকাসকে লেবাননে স্থানান্তর করতে পারে। কারণ ৭ অক্টোবরের পর থেকেই হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েল। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এটা শুধুই প্রতিশোধমূলক নাও হতে পারে। হিজবুল্লাহর প্রতিটি হামলার জন্য ইসরায়েল লেবাননে পাঁচটির বেশি হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল এই সময়ে ৩০০ হিজবুল্লাহ সদস্য ও ৭০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। আর ইসরায়েল বলেছে, তাদের ১৫ সেনা ও ১০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।

অবশ্য বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়াই লেবাননের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে ইসরায়েল। উত্তর ইসরায়েলের ওই সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান শুরুর পর থেকে অন্তত ৯০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ওই সীমান্তে বেসামরিক নাগরিকরা ফিরে আসার আগেই হিজবুল্লাহকে পিছু হটার ব্যবস্থা করতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।

গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল লেবাননের সীমান্তে তীব্র অভিযানের জন্য প্রস্তুত।

বৈরুতের সেন্ট জোসেফ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক করিম এমিল বিতার বলেছেন, ইসরায়েলের এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত মতামত জরিপে দেখা যায়, ৭০ শতাংশেরও বেশি ইসরায়েলিও চায় হিজবুল্লাহকে সরিয়ে দিতে। তবে হিজবুল্লাহ ও লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মানেই ইসরায়েলের নিশ্চিত বিজয় নয়।

বিতার বলেছেন, এখন যে কোনও যুদ্ধই হবে প্রতিকূল। এর ফলে লেবানিজ ও ইসরায়েলি উভয়কেই ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালে দক্ষিণ লেবানন আক্রমণ করেছিল ইসরায়েল। ১৯৮২ সালে লেবানন আক্রমণের সময়ই ইরান সমর্থিত শিয়া লেবানিজ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ গঠিত হয়েছিল।

ইসরায়েল যদিও ১৯৮৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ লেবানন দখল করে, কিন্তু হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ সবসময়ই হিজবুল্লাহর ভয়ে কাটাতে হয় ইসরায়েলি বাহিনীকে।

বর্তমানে হিজবুল্লাহকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অ-রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর হামাসের তুলনায় তাদের সামরিক সক্ষমতাও অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে, হিজবুল্লাহ যুদ্ধক্ষেত্রে আগে ব্যবহার করা হয়নি এমন নতুন অস্ত্রও ব্যবহার করেছে।

এদিকে লেবাননের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ। আরেকটি যুদ্ধের পরিণতি তারা বহন করতে পারবে না। তাদের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে বলে মনে করছেন হিজবুল্লাহ পলিটিক্স অ্যান্ড রিলিজিয়ন বইযয়ের লেখক আমাল সাদ আল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.