সাকিবের ব্যাটের ঝলসানো হাসিতে হাসলো বাংলাদেশ

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ব্যাটে রান নেই, বোলিংয়েও নেই ধার। গত দুই ম্যাচে সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স ছিল এমনই। ভক্ত সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে কেউ কেউ তার নামের পাশে ফুলস্টপ বসিয়ে দিচ্ছিলেন। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দ্রর শেবাগ তো সাকিবকে অবসর নিতেই বলেছিলেন। গত কয়েকদিন ধরেই সাকিবের ফর্ম নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাট-বলে কিছু করতে না পারা সাকিবই নেদারল্যান্ডেস বিপক্ষে দলকে জেতালেন। ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ৬৪ রানের পর কিপ্টে বোলিংয়ে রেখেছেন ভূমিকা। সাকিবের ব্যাট হেসেছে, তাই বাংলাদেশও হাসতে পেরেছে! ডাচদের ২৫ রানের হারিয়ে প্রথমবারের মতো সুপার এইটে খেলার পথে এক পা বাড়িয়ে রাখলো বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাট ও বল হাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সাকিব। লঙ্কানদের বিপক্ষে ৩ ওভার বোলিং করে ৩০ রানে ছিলেন উইকেটশূন্য, ব্যাট হাতে করেছেন ৮ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ছিলেন ব্যর্থ। বল হাতে এক ওভারে ৬ রান খরচ করে উইকেটশূন্য ছিলেন। ব্যাট হাতে মাত্র ৩ রান। যার প্রভাব পড়েছে র‍্যাঙ্কিংয়ে। সিংহাসনচ্যূত হয়ে নেমে গেছেন পাঁচ নম্বরে। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ছিলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। তবে ব্যাট হাতে সমালোচকদের ‘দাঁত’ ভাঙ্গা জবাব দিতে খুব বেশি দেরি করেননি তিনি। ডাচদের বিপক্ষে তার অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সেই হেসেছে বাংলাদেশ। পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কারও।

মিডল অর্ডারে সাকিবের পারফরম্যান্স বাংলাদেশ দলের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। দলের সবচেয়ে সেরা ও অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। তার কাছে ভক্তদের প্রত্যাশাও আকাশছোঁয়া। কিন্তু সেই প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির যোগসূত্র মেলাতে পারছিলেন না তিনি। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলেও তাওহীদ হৃদয়ের দৃঢ়তায় কোনোরকমে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আউট হয়ে দলকে বিপদে ফেলে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। অথচ ওই কঠিন মুহূর্তে ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর কথা ছিল তারই। আগের দুই ম্যাচে ভুল করলেও আজ আর কোনও ভুল করেননি বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পোস্টার বয়। ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ৬৪ রানের ইনিংসের পর বল হাতেও ভালো করেছেন সাকিব। আর তাতেই বাংলাদেশ হাসি মুখে মাঠ ছাড়তে পেরেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাজে’ উইকেটে খেলতে গিয়ে রান করতে পারছিল না কোনও দলই। তবে খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজে সরে যেতেই প্রতিটি দলই কম বেশি রানের দেখা পাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নোস ভ্যালে গ্রাউন্ডে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ। শুরুতে নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসকে হারানোর পর ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও সাকিব আল হাসান মিলে দারুণ শুরু এনে দেন দলকে। ধারণা করা হচ্ছিল, বাংলাদেশের স্কোর হয়তো পৌঁছে যাবে ১৮০ রানের কাছাকাছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৮ বছর পর পাওয়া সাকিবের হাফ সেঞ্চুরিতে ১৫৯ রান সংগ্রহ পায় টিম টাইগার্স।

কিন্তু সাকিব ব্যাটিংয়ে ভালো করলেও লিটন-শান্তর ব্যাটিং চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে ঠিকই। ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচে দুই জনই ফিরেছেন ব্যক্তিগত ১ রানে। প্রথম দুই ম্যাচের মতো নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ভেঙ্গেছে ৩ রানে। ওপেনিংয়ে নিজেকে প্রমোশন দিয়েও ভাগ্য বদলায়নি শান্তর। দ্বিতীয় ওভারে ডাচ স্পিনার আরিয়ান দত্তকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ি¯্লপে বিক্রমজিত সিংকে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরিয়ান ফেরান লিটন দাসকে। ২ বলে ১ রান করা লিটন ¯্লগ সুইপে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মিড উইকেটে। তবে দ্রুত দুই উইকেট হারালেও এই ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান (৫৪) তোলে বাংলাদেশ।

জুনিয়র তামিম ভালো শুরুর পরও ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি। আউট হয়েছেন ২৬ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর ২১ বলে ২৫ এবং জাকের আলী অনিকের ৭ বলে ১৪ রানের ইনিংস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশের স্কোরকে ১৫৯ রানে নিয়ে যেতে। জাকেরের মতো সাকিবও অপরাজিত থাকেন। ৪৬ বলে ৯ চারে ৬৪ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।

সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেটে ডাচদের এই লক্ষ্যটা খুব কঠিন ছিল না। পাওয়ার প্লের আগে ৩২ রানে ২ উইকেট তুলে নেওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়ায় ডাচরা। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে চাপ সামলে তৃতীয় উইকেটে ২৩ বলে ৩৭ রানের দারুন এক জুটি গড়েন বিক্রমজিৎ সিং ও সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট । দশম ওভারে বিক্রমজিৎকে ফিরিয়ে দলকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু লাভ হয়নি কিছুই। চতুর্থ উইকেটে স্কট এডওয়ার্ডস ও এঙ্গেলব্রেখটের বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন।

তবে নিজের প্রথম ওভারে ১৪ রান খরচ করা রিশাদ এবার ব্রেক-থ্রু এনে দেন। উইকেটে জমে যাওয়া এডওয়ার্ডস ও এঙ্গেলব্রেখটের ৩১ বলে ৪২ রানের জুটি ভাঙ্গেন তিনি। একই ওভারে ফেরান বাস ডি লিডকেও। পরের ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান আউট করেন এডওয়ার্ডসকে (২৫)। তারপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ডাচরা। রিশাদ ৩৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট এবং তাসকিন ৩০ রান খরচ করে ২টি উইকেট নিয়েছেন। মোস্তাফিজ একটি উইকেট নিলেও ছিলেন সবচেয়ে কিপ্টে। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান খরচ করেছেন তিনি। মোস্তাফিজের মতো তানজিম সাকিবও একটি উইকেট নিয়েছেন ২৩ রান খরচ করে। সাকিব আল হাসান ২৯ রান খরচ করে উইকেটশূন্য ছিলেন। বিশেষ করে শেষ দিকে তার বোলিংয়ের বিপক্ষে খেলতেই পারেনি ডাচ ব্যাটাররা। ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে ভালো করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.