প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড বেড়ে ১১ কোটি ৭০ লাখ ৩ হাজার জনে দাঁড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে। বৈশ্বিক রাজনীতিতে পরিবর্তন না এলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটির হাই কমিশনার। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, বাস্তুচ্যুত হওয়া এসব মানুষেরা হলেন ‘শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এবং সংঘাত, নিপীড়ন, ভিন্ন ভিন্ন ও ক্রমবর্ধমান জটিল ধরনের সহিংসতার কারণে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষ।’
এসময় তিনি সংঘাতকে ‘বাস্তুচ্যুতির গভীর চালক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির বৈশ্বিক প্রবণতা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে ইউএনএইচসিআর বলেছে, গত ১২ বছরে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের বার্ষিক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউএনএইচসিআর-এর অনুমান, ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এপ্রিলের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা ১২ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল।
নতুন সংঘাতের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে গ্র্যান্ডি বলেছিলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।’
বাস্তুচ্যুতকে প্রসারিত করার পেছনে যে সংঘাতগুলো ভূমিকা রেখেছে এর মধ্যে সুদানের যুদ্ধ অন্যতম। অন্যান্য সংকটের তুলনায় এই সংঘাতের দিকে যদিও কম মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, তবে গ্র্যান্ডি এটিকে সংঘাতগুলোর মধ্যে ‘সবচেয়ে বিপর্যয়কর একটি বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এই সংঘাতে ৯০ লাখের বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। চাদ, মিসর এবং দক্ষিণ সুদানসহ প্রতিবেশি দেশগুলোতে পালিয়ে গেছেন আরও ২০ লাখ মানুষ।
চাদে নিরাপত্তার সন্ধানে আসা মানুষদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে ‘প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন।’ অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ ও স্থল হামলার কারণে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন একাধিকবার। বাস্তুচ্যুত হওয়া এই মানুষের সংখ্যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ।
ইসরায়েলের সামরিক হামলা থেকে বাঁচতে গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণ সীমান্ত শহর রাফাহ থেকে মিসরে সম্ভাব্য পারাপার একটি বিপর্যয়কর ঘটনা হবে বলে সতর্ক করেছিলেন গ্র্যান্ডি। তিনি বলেছিলেন, ‘গাজার বাইরে আরেকটি শরণার্থী সংকট সব স্তরে বিপর্যয়কর হবে। কেননা, সেসব মানুষ একদিন গাজায় ফিরতে পারবেন এমন কোনও গ্যারান্টি আমাদের কাছে নেই।’