স্বনির্ভর জাতি ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের অর্জন

বাআ ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যেমন পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাংলাদেশ। তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সেই দেশকে উন্নয়নশীল ডিজিটাল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। উগ্রবাদের কড়াল গ্রাস মোকাবিলা করেও, মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে ক্ষুধাপীড়িত দেশকে নিজস্ব ’দারিদ্র্য বিমোচন মডেল’-এর মাধ্যমে আধুনিক-আত্মনির্ভর রাষ্ট্রে রূপান্তরিত রূপান্তরিত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং জাতীয় চার নেতাকে খুনের পর যে দুঃসহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশকে, সেই হিংস্র থাবায় কিছুটা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকারী দল আওয়ামী লীগও। কিন্তু পরবর্তীতে দেশে ফিরে এসে, আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের মাধ্যমে, নিপীড়িত বাঙালি জাতিকে আবারো জীবনের স্বপ্ন দেখান শেখ হাসিনা।

স্বৈরচারের পতন ঘটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা; বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের কারণে বহুধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে একসূতোয় বাঁধতে, ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দলীয় প্রধান নির্বাচিত করেন নিবেদিত নেতাকর্মীরা। এরপর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। পিতার মতোই ছুটতে শুরু করেন দেশের প্রতিটি অঞ্চলে।

গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের দারিদ্র্যপীড়িত কষ্টের জীবন দেখে দেশ পুনর্গঠনের শপথ নেন। সেজন্য আগে পুনর্গঠিত করেন আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিট। এরপর নিবেদিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাধ্যমে দেশজুড়ে উগ্রবাদ ও স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে তীব্র জনমত গড়ে তোলেন।

ফলে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয় শেখ হাসিনাকে। প্রায় এক দশক নিরলস সংগ্রামের পর স্বৈরাচারের পতন ঘটে ও গণতন্ত্র ফিরে আসে বাংলাদেশে। কিন্তু ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জনপ্রিয় ভোট অর্জন করলেও, ভোটের সময় বিএনপি ও দেশবিরোধী শক্তি কর্তৃক কিছু সুক্ষ্ম কারচুপির শিকার হয়ে সরকার গঠন ব্যর্থ হয় আওয়ামী লীগ। এছাড়াও দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ ও ষড়যন্ত্রের কারণে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ ভোট (৬ লাখের বেশি) কাটা পড়ে আওয়ামী লীগের, যার প্রভাব পড়ে প্রতিটি আসনে, ফলে খুব স্বল্প ভোটের ব্যবধানে অর্ধশতাধিক আসনে হেরে যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

ফলে চূড়ান্তভাবে মাত্র দশমিক ৮ শতাংশের কম (প্রায় আড়াই লাখ) ভোটের ব্যবধানে বিরোধীদলের আসনে বসতে হয় শেখ হাসিনাকে। প্রধান বিরোধী দলীয় নেতার আসনে বসে, বিএনপি সরকারকে চাপ দিয়ে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করতে বাধ্য করেন তিনি।

২১ বছর পর ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের বিজয় :  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শক্তিশালী বিরোধীদল হিসেবে আওয়ামী লীগের অনমনীয় মনোভাবের কারণেই জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থা ফিরে আসে বাংলাদেশে। অন্যদিক, উগ্রবাদী ও স্বৈরাচারদের মোকাবিলার পর, নিজের দলকে ভেতর থেকে সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে তুলতে মনোনিবেশ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তার পাঁচ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর অবশেষে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয় মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী এই দলটি।

পরবর্তীতে, নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। রাজপথ থেকে আওয়ামী লীগকে সরানোর জন্য প্রকাশ্যে বোমা ও গ্রেনেড মেরে হত্যার অপচেষ্টা করা হয় শেখ হাসিনাকে। কিন্তু নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথ আঁকড়ে ধরেন তিনি। তাই জনমতকে ভয় পেতে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট। ফলে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করে, ২০০৭ সালে একটি সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে সরকারে থাকার অপপ্রয়াস চালায় উগ্রবাদীরা।

কিন্তু শেখ হাসিনার অনড় অবস্থানের কারণে তাদের পতন ঘটে। এরপর তত্ত্ববধায়ক সরকারের কাছে ভুয়া ভোটার তালিকা বাতিল করে ছবিযুক্ত নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ণ ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান তিনি। যার ফলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের ব্যবধানে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে ২০০৯ সালে আবারো সরকার গঠন করতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

গণমানুষকে দেওয়া মুক্তিসংগ্রামের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন: বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়েই সাধারণ মানুষের খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত করার কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর এই মানবিক দর্শনই আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হয়। ফলে গণমানুষের দলে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ। তাই ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েই নিপীড়িত বঞ্চিত সাধারণ মানুষের জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাতে বহুমাত্রিক সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

ফলে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার কারণে ভারতের সঙ্গে দুই যুগ ধরে অমীমাংসিত পানিবণ্টন চুক্তি করতে সমর্থ হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এই চুক্তির ফলে গঙ্গা নদীর পানি নিয়ে দ্বন্ধের অবসান ঘটে এবং শুষ্ক মৌসুমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমিগুলোতে ফসল উৎপাদন এবং কৃষিকাজের জন্য সেঁচ ব্যবস্থা সহজ হয়ে যায়। এরফলে দেশের ৭২ শতাংশ শুষ্ক ভূমি সেঁচের আওতায় আসে। পানিপ্রবাহ এবং সেঁচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে কৃষি উৎপাদন বেড়ে যায়।

ফলে ১৯৯৯ সালে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনের পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়- শেখ হাসিনা সরকার গঠনের মাত্র তিন বছরের মধ্যে।

দ্বন্ধ নিরসন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন : ১৯৭৫ সালের পর, স্বৈরশাসকদের অদূরদর্শিতায়, দেশের পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সাথে বিবাদ সৃষ্টি হয়। অস্ত্রের ঝনঝনানির কারণে দেশের বাকি অঞ্চল থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পাহাড়ি এলাকাগুলো। কিন্তু ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পার্বত্য সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তার প্রচেষ্টায় ১৯৯৭ সালে পার্বত্য অঞ্চলের বিবাদমান জনগোষ্ঠীর সাথে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে সেখানে বসবাসরত বাঙালি এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে দেশের যেকোনো প্রান্তের মানুষের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ তৈরি হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দেশের জলসীমায় ন্যায্য হিস্যা আদায়ের প্রচেষ্টা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সালিশি আদালতে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে ২০১৪ সালে এসে, ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমার ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার জলসীমা জয় করতে সমর্থ হয়। ফলে ভারতের দাবিকৃত ১০টি গ্যাসব্লকের সবগুলোই পায়। এর আগে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সাথেও সমুদ্রসীমার বিরোধ নিস্পত্তি করে বিশাল জলাধারের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদেশ। ওই অঞ্চলের সমুদ্রে অবস্থিত ২৮টি ব্লকের মধ্যে ১৮টি ব্লকের মালিকানাও পায় বাংলাদেশ।

এর ফলে, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলা বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধের অবসান ঘটাযতে সমর্থ হয় আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশ লাভ করে একটি স্থায়ী সমুদ্রসীমা, যার আয়তন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কি.মি। অথচ এর আগে, বাংলাদেশ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমাও ভোগ করতে পারতো না। কারণ, অন্য কোনো সরকারই দেশের এসব ন্যায্য পাওনা বুঝে পেতে চেষ্টা করেনি।

দুর্যোগ মোকাবিলা এবং মানবিক কল্যাণরাষ্ট্র অর্জন : ১৯৯৮ সালের প্রবল বন্যায় যখন দেশের ৭০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তখন প্রায় এক কোটি মানুষের মৃত্যুর পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পরিকল্পিত ত্রাণ পরিচালনা ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মসূচির কারণে একটি মানুষকেও অনাহারে বা মহামারিতে প্রাণ হারাতে হয়নি। দুর্যোগ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার ভূমিকা দেখে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাকে বিস্ময়কর নেতৃত্ব বলে অভিহিত করা হয় তখন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার পর দেশকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা। সেই ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে, করোনাকালেও থেমে থাকেনি মানবিক উন্নয়ন কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ কোটিরও বেশি মানুষের ঘরে নিয়মিত সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫০ লাখ কৃষক-শ্রমিক-মজুরের হাতে।

সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করা এবং নিম্ন আয়ের মানুষকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সুরক্ষা দিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের ৫০ লাখ পরিবারকে বছরে কর্মাভাবকালীন ৫ মাস প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সমগ্র বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের প্রায় ১ কোটি পরিবারের নিকট টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে।

এছাড়াও বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীসহ প্রায় এক কোটি ব্যক্তিকে নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে সুরক্ষা ভাতা। নারীদের জন্য গর্ভকালীন ছুটি চার মাস থেকে বৃদ্ধি করে ছয় মাস করা হয়েছে, চালু হয়েছে পিতৃকালীন ছুটিও। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য সম্মানি কয়েকধাপে বৃদ্ধি করে ২০ হাজার টাকা উত্তীর্ণ করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁদের আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিনামূল্যে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার ৫৭টি বীর নিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছে। মাতৃমৃত্যুর হার ২০০৭ সালে ছিল প্রতি লক্ষে ৩৫১ যা বর্তমানে হ্রাস পেয়ে ১৩৬ হয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার ২০০৭ সালে ছিল প্রতি হাজারে ৬০, যা বর্তমানে হ্রাস পেয়ে ৩৩-তে নেমে এসেছে। প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ২০০৭ সালে ছিল ৬৬.৬, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ৭২.৩ এ উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এক বছর বয়সের নীচের শিশুর পূর্ণ টিকা প্রাপ্তির হার ৭৫ শতাংশ থেকে ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

শিক্ষার প্রধান উপকরণ বই যাতে শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতেই পায় সে লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর প্রাথমিক স্তরের শিশুদের ১ জানুয়ারি ‘বই উৎসব’ এর মাধ্যমে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান করা হচ্ছে। সরকারের সুচিন্তিত নীতির ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় নিট ভর্তির হার ২০০৯ সালের ৯০.৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ৯৭.৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে অভ্যস্ত করে তুলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১ লক্ষের অধিক ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ইন্টারনেটসহ সাউন্ড-সিস্টেম সরবরাহ করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির হার ৭১.৮২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় পরিচালিত সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির মাধ্যমে গত ৩ বছরে মোট ১ কোটি ৫৫ লক্ষ ২৯ হাজার ৭৯৯ জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত স্নাতক পর্যায়ের মোট ১৫ লক্ষ ৫৭ হাজার ৫৬২ জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, স্নাতক পর্যায়ে যে সকল শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশ নারী।

১৯৯৭ সাল হতে এ পর্যন্ত আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোট ৫ লক্ষ ৭৮ হাজার ৩১২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

২০০৯ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নেন, তখনও দেশের মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। বিদ্যুতের সংযোগ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১০ লাখ, সেখানে এখন তা ৩ কোটি ৫০ লাখের বেশি। ৪ হাজার মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ ৭০ হাজার গ্রামে বিদ্যুতের সংযোগ পৌঁছে দিয়েছে সরকার। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও চালু হতে যাচ্ছে শিগগিরই। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। নিজস্ব অর্থায়নে পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা নদী পদ্মার বুকে দ্বিতল সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সাহস ও আত্মবিশ্বাসের কারণেই এসব অকল্পনীয় কর্মকান্ড সম্পাদন করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি দৈনিক প্রায় ১০০০-১০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানীকৃত এলএনজি জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি হতে জানুয়ারি ২০২৪ সময় পর্যন্ত প্রায় ১৪ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে।

এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ, ঢাকার যানজট কমাতে মেট্রোরেল, দেশের মহাসড়কগুলোকে চার ও ছয় লেনে উন্নীত করা এবং শতাধিক নান্দনিক ব্রিজ-কার্লভাটের মাধ্যমে জনগণের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সঠিক ধর্মশিক্ষা ও ধর্মচর্চার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই তৈরি করা হয়েছে ৫৬০টি মডেল মসজিদ।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহাসড়কে ১ হাজার ৪৩৯টি সেতু নির্মাণ/পুননির্মাণ করা হয়েছে এবং ৮৫১.৬২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ২০৪১ সাল নাগাদ ১২টি এক্সপ্রেসওয়ে এবং দশটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। 

আন্তর্জাতিক বিশ্ব যখন ক্ষুদ্র ঋণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় সাফল্য ধরা দিয়েছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে, প্রথমে ভূমিহীনদের জন্য এককালীন ভূমি ও বাড়ি করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করা হয় জামানত-ছাড়াই সুদমুক্ত ঋণ এবং কর্মপ্রশিক্ষণ। ফলে, মাথাগোঁজার ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ায় পর- ছিন্নমূল মানুষ নিজেরাই ফিরে পেয়েছে কর্মস্পৃহা, খুঁজে নিচ্ছে নিজেদের কর্ম। ফলে শিক্ষার আলোয় হাসতে শুরু করেছে তাদের নতুন প্রজন্ম। এটাই শেখ হাসিনার দারিদ্র-বিমোচন মডেল। শেখ হাসিনার এসব উদ্যোগের কারণেই, ২০১৯ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের মডেল’ হিসেবে অভিহিত করেন।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার এবং অন্যান্য ডিজিটাল সেবা রফতানি করছে। এছাড়াও প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বছরে ৫০০ মিলিয়নের বেশি ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করছে। এই খাত থেকে আগামী ৫ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে। অথচ ২০০৯ সালের আগে ইন্টারনেটের ব্যবহারই জানতো না দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ। ২০০৮ সালে প্রতি এমবিপিএস ফিক্সড ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ এর সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ২৭ হাজার টাকা, বর্তমানে মাত্র ৬০ টাকা।

২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রবাস আয়ের পরিমাণ ছিল ১০.৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়ে ২১.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

দেশের উন্নয়নে যুব সমাজকে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করতে গত দেড় দশকে ৩৭ লক্ষ ৪৬ হাজার যুবককে বিভিন্ন দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং ১ হাজার ৪৩৭ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

বাঙালি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অদম্য স্পৃহা ও অনুপ্রেরণার কারণেই মাত্র এক যুগের মধ্যে বিশ্বের বুকে ডিজিটাল ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.