প্রশান্তি ডেক্স ॥ উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও পানিতে ডুবে আছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। গত বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার (২১ জুন) দিনে পানি কমে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। নতুন করে কোনও ভাঙ্গন দেখা না দিলেও পুরনো ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করছে।
কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের ভিড় বাড়ছে।
বন্যায় বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার মানুষ। জেলার ৭ উপজেলার ৪৭ ইউনিয়নের ৪৫০টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।
বন্যাকবলিত এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। গবাদিপশুসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন মানুষজন। জেলার বেশির ভাগ গ্রামীণ জনপদের সড়ক তলিয়ে গেছে। আঞ্চলিক মহাসড়কের অনেক স্থানে পানি উঠেছে। বন্যার পানির তোড়ে ডুবে গিয়ে এ পর্যন্ত ৩ জন মারা গেছেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মনু নদীর রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটি মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদী কমলগঞ্জ রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৭৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া কুশিয়ারা নদী মৌলভীবাজার শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী নদী ভবানীপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২০৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘উজানে ভারত অংশে বৃষ্টি না হওয়াতে আগের চেয়ে বন্যার পানি কমেছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ আরও উঁচু করা হচ্ছে, যাতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে না পারে।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের হিসাবমতে, জেলার ৭ উপজেলার ৪৭ ইউনিয়নের ৪৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪০২ জন মানুষ পানিবন্দি। ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ হাজার বন্যার্ত মানুষ ও ২০০ গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। মেডিক্যাল টিম রয়েছে ৭০টি। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ৬৫ হাজার সরবরাহ করা হয়েছে। জেলায় ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে ৪২২ মেট্রিক টন। নগদ ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা, শুকনো খাবার ২ হাজার ৫০০ প্যাকেট, রান্না করা খাবার ১ হাজার ২০০ প্যাকেট ও খাবার স্যালাইন ২ হাজার ৫০০ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যায় জেলায় মারা গেছেন ৩ জন। দুজন সদর উপজেলার এবং আরেকজন স্কুলশিক্ষার্থী বড়লেখা উপজেলার।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে আমরা সার্বক্ষণিক সেগুলো নজরদারি করছি। প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) দুর্যোগ মোকাবিলায় মাঠে নিয়োজিত আছেন। আগের চেয়ে বন্যার পানি কমেছে। তবে জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’