প্রশান্তি ডেক্স ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০১১ সালে পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনার সময় সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ। এক দশকে তা প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে ৭২ শতাংশ হয়েছে। পুরুষের তুলনায় নারীদের সাক্ষরতার হার বেড়েছে। তবে সাধারণ পড়াশোনার হার সাড়ে ৯৫ শতাংশ থেকে কমে ৮৮ শতাংশে নেমেছে। বিপরীতে ধর্মীয় পড়াশোনা ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৯ শতাংশ হয়েছে।
প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বর্তমানে ৩৩ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫ জন শিক্ষা, কাজ বা প্রশিক্ষণ কোনও কিছুতে সম্পৃক্ত নয়, যা মোট জনসংখ্যার ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জনশুমারির জেলা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন।
২০২২ সালের ডিজিটাল জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বর্তমানে ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৬২ জন পুরুষ ও ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ১৪৫ জন নারীর বসবাস। এর মধ্যে গ্রামে বসবাস করেন ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৫ ও শহরে থাকেন ৬ লাখ ৮১ হাজার ৮৭৮। বস্তিতে বসবাস করেন ৮ হাজার ১৩২ জন এবং ভাসমান মানুষের সংখ্যা ৬৬৯।
এর আগে ১৯৯১ সালে জেলায় জনসংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৫, ২০০১ সালে ছিল ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ২৫৪ এবং ২০১১ সালে ২৮ লাখ ৪০ হাজার ৪৯৮ জন বসবাস করতেন। জেলায় বর্তমানে ৩০ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪২ জন মুসলিম ও ২ লাখ ২০ হাজার ৯৬০ হিন্দু ধর্মাবলম্বীর বাস। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, হিন্দু ২ লাখ ১১ হাজার ৮৯৯, খ্রিষ্টান ৩৮৯, বৌদ্ধ ১১৮ ও অন্যান্য ৪৯ জন বাসিন্দা ছিলেন।
বর্তমানে (২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ১২, যার মধ্যে পুরুষের সাক্ষরতা ৭১ দশমিক ৭৪ ও নারীদের সাক্ষরতা ৭২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর আগে ১৯৯১ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ২৬ দশমিক ৬, ২০০১ সালে ৩৯ দশমিক ৫ এবং ২০১১ সালে ছিল ৪৫ দশমিক ২৯ শতাংশ, অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে জেলায় ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ সাক্ষরতার হার বেড়েছে।
বর্তমানে ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ব্যক্তিরা শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫৬ দশমিক ৬০ শতাংশ পুরুষ ও ৫১ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী। জেলায় বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার হার ৮৮ দশমিক ২১, কারিগরি বা ভোকেশনালে শূন্য দশমিক ৩৪, ধর্মীয় শিক্ষায় ৮ দশমিক ৯৬ ও অন্যান্য ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর আগে ২০১১ ও ২০০১ সালে সাধারণ শিক্ষার হার ছিল ৯৫ দশমিক ৬৮, কারিগরি বা ভোকেশনালে শূন্য দশমিক ২৫ ও ধর্মীয় শিক্ষায় ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ১৯৯১ সালে সাধারণ পড়াশোনা ৯৬ দশমিক ৮২, কারিগরিতে দশমিক ৬১ ও ধর্মীয় শিক্ষার হার ছিল ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত ১০ বছরে সাধারণ শিক্ষার হার কমেছে ৭ দশমিক ৩৬, অন্যদিকে ধর্মীয় শিক্ষার হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
জনশুমারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলায় বর্তমানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ৭৫৮ জন মানুষ বসবাস করেন। এর আগে ২০১১ সালে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ৫১০, ২০০১ সালে ১ হাজার ২৪৪ এবং ১৯৯১ সালে ১ হাজার ১১১ জন বাসিন্দা বসবাস করতেন। তবে ১০ বছরে জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। বর্তমানে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৫। এটি ২০১১ সালে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ ছিল। মোট জনগোষ্ঠীর শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী শিশু ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭২ জনের বেশি অন্যের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ১০ বছর বা তার বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ বিবাহিত এবং ৩৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ অবিবাহিত। পুরুষ ও নারীর বিবাহের গড় বয়স যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৪৮ ও ১৯ দশমিক শূন্য ৭ বছর।
জেলার মোট জনগোষ্ঠীর ৪৬ দশমিক ২৯ শতাংশ সেবা খাতে, ৪১ দশমিক ৪৪ শতাংশ কৃষি খাতে ও ১২ দশমিক ৩৬ শতাংশ শিল্প খাতে কর্মরত আছেন। জেলার মোট ২ লাখ ৩৬ হাজার ৩৬৬টি খানা (বাড়ি) প্রবাস থেকে আয় করে। আর মোট প্রবাসে আছেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ১৪৫ জন।