প্রশান্তি ডেক্স ॥ ২০ টাকা খরচ করে প্রবেশ করা যেত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেনে। এক লাফে এই টিকিটের মূল্য বেড়েছে পাঁচ গুণ। এখন উদ্যান বা গার্ডেন দেখতে প্রতি দর্শনার্থীকে দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত এই উদ্যান তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের। পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী নিজেই বলেছেন এই বৃদ্ধি ‘অযৌক্তিক’ এবং এটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনের নতুন প্রবেশ ফি কার্যকর করা হয়েছে। গত ২১ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনে ফি বাড়ানোর এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
দর্শনার্থী ছাড়া বিদেশি পর্যটক ও শরীরচর্চার জন্য উদ্যানে যারা নিয়মিত হাঁটতে আসেন তাদের জন্যও আলাদা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রত্যেক বিদেশি পর্যটকের জন্য প্রবেশমূল্য ১০০০ টাকা বা সমমূল্যের ইউএস ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উদ্যানে হাঁটতে আসা ব্যক্তিদের একটি বাৎসরিক কার্ড করতে হবে। এর জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। আগে যা ফ্রি ছিল। তবে নতুন নিয়মে হাঁটতে এসে পার্কে অবস্থান করা যাবে মাত্র এক ঘণ্টা।
জাতীয় উদ্যানে প্রবেশের নতুন ফি’র তালিকা
এভাবে উদ্যানে প্রবেশ ফি পাঁচ গুণ বাড়ানোয় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আগত দর্শনার্থীরা। তারা বলেন, রাজধানীতে খোলা সবুজ উদ্যান দিন দিন কমে আসছে। সেখানে জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি বাড়িয়ে সাধারণ জনগণকে প্রকৃতি থেকে বঞ্চিত করা হবে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে প্রবেশে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে, যা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে।
উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, অনেক দর্শনার্থী নতুন মূল্য শুনে ফিরে যাচ্ছেন। প্রবেশ করছেন এমন লোকের সংখ্যা কম বলে মনে করেন টিকিট বিক্রেতারা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্যানে গাছের চারা নিতে আসা ডা. আনোয়ার বলেন, এখানে প্রবেশ ফি বাড়িয়ে সরকার কত টাকাই বা বেশি আয় করতে পারবে। আমি মনে করি উদ্যানের প্রবেশ ফি সামান্য বাড়াতে পারে। পাঁচ গুণ বৃদ্ধিটা সাধারণ জনগণকে উদ্যানে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করবে।
কুয়াকাটা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা শাহরিয়ার কবির বলেন, উদ্যানে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। তবে গাছপালার মধ্যে সময় কাটাতে ভালো লাগে। এর আগে আমি একা এসেছি। সুন্দর সময় কেটেছে। শুধু সময় কাটানোর জন্য এত টাকা অনেকেরই দেওয়ার ইচ্ছে বা সামর্থ্য নেই।
প্রবেশ ফি বাড়ানোর বিষয়ে জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সোহালা সরকার বলেন, আমরা কেবল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি। ইতোমধ্যে ইজারাদাররা নতুন প্রবেশ ফি’র শর্ত মেনেই ইজারা নিয়েছেন। তারা ইজারার শর্তের প্রথম কিস্তির টাকাও পরিশোধ করেছেন।
ইজারা কত টাকায় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে ইজারা হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মতো। নতুন ইজারা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ইজারার এই টাকা রাজস্ব খাতে যুক্ত হবে। বাকি টিকিটের টাকার লাভ-ক্ষতি ইজারাদারদের ওপর বর্তাবে বলে জানান তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, উদ্যানের পক্ষ থেকে ফি বাড়ানোর জন্য আমরা এর আগে কোনও চিঠি পাঠাইনি।
এদিকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ২০ টাকার ফি বাড়িয়ে ১০০ টাকা করাকে ‘অযৌক্তিক’ অভিহিত করেছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, এটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এখানে একটা রাজস্ব চাহিদা আছে। তবে এত বাড়ানো উচিত না বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
উদ্যান থেকে লাভ খোঁজাটা একেবারেই অনুচিত বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলেন, নাগরিক সুযোগ সুবিধার মধ্যে একটি হলো খোলা মাঠ ও উদ্যান থাকা। সেখানে এভাবে প্রবেশমূল্য বাড়ানোটা অন্যায়।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহম্মদ খান বলেন, কোনও খোলা মাঠ বা পার্কে প্রবেশ ফি রাখাটাই ঠিক না। সেখানে জাতীয় উদ্যানের মতো একটি স্থানের বিবেচনায় যতটুকু প্রয়োজন এর অধিক প্রবেশ ফি রাখাটা অন্যায়। এখানে সরকারের কোনও ধরনের বাণিজ্যিক চিন্তা থাকলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।