প্রশান্তি ডেক্স ॥ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিশ্চিত হতে নয় দফা শর্ত দিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এই নয় দফা শর্ত পূরন সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর তারা জানাবে সরকারের সঙ্গে বসবে কিনা। গত শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তর্থ্য জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তীতে এই আন্দোলনকারী বলেন, একটি বৈষম্যহীন ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে দেশের ছাত্র সমাজ। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল কোটা পদ্ধতির সংস্কার করে সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ কোটা রেখে বাকি পদসমূহে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের। কিন্তু সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিয়ে বারবার টালবাহানা করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শান্তিপুর্ণ আন্দোলনের ওপর পুলিশ ও সসন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরি প্রত্যাশীদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভকে উষ্কে দিয়ে চলমান পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। গত ১৫ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে রক্তাক্ত করে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুচিয়ে উল্লাস করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যা সারাদেশের মানুষকে দারুনভাবে ব্যথিত করেছে। ফলে পরবর্তী অন্যান্য কমসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সবস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করে কর্মসূচিকে সফল করে তুলেছেন। উক্ত কর্মসূচিতে পুলিশ নগ্নভাবে হামলা পরিচালনা করে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপ্রিয় আন্দোলনে গুলি-বোমা-টিয়ারগ্যাস চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের এক যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতা চালিয়ে সরকার দ্রুত পরিস্থিতি তৈরী করেছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে সরকারের। সরকার আলোচনা / সংলাপের কোনো পরিস্থিতি রাখেনি। এখন সংলাপের কথা বলে নতুন প্রহসন করছে এবং কয়েকজন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ককে গুম করে তাদের মাধ্যমে জোরপূর্বক গণমাধ্যমে ভূল সংবাদ প্রচারের চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় আমরা উপস্থিতি সমন্বয়করা মিটিং করে সিদ্দান্ত গ্রহণ করেছি যে, প্রায় অর্ধশত শহীদের রক্ত মাড়িয়ে ছাত্র সমাজ কোনো সংলাপে যাবে না। ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আমরা ৮ দফা দাবি জানিয়েছি। এই দফাসমূহ মানার পর আমরা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সংলাপে বসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। দাবি বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত আমাদের চলমান কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। শুধুমাত্র হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোন প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না। অ্যাম্বুলেন্স ও সংবাদপত্রের গাড়ি ব্যতীত সড়কে কোন গাড়ি চলবে না।
ঙ্ ৫% ভাগ কোটা রেখে বাকি ৯৫% ভাগ মেধাবীদের জন্য উন্মুক্ত করে সংবিধানে আইন পাস করতে হবে।
তাদের আট দফার মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধ উপায়ে ব্যবহার করে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী উভয়কে মন্ত্রীপরিষদ ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
ঢাকা শহরের যত জায়গায় ছাত্র শহীদ হয়েছে সেখানের ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায্য ও প্রক্টররকে পদত্যাগ করতে হবে।
যে পুলিশ সদস্যরা গুলি করেছে, ছাত্রলীগ যুবলীগসহ যেসকল সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা পরিচালনা করেছে এবং পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে তাদের আটক করে এবং হত্যা মামলা দায়ের করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার দেখাতে হবে।
দেশব্যাপী যে সকল শিক্ষার্থী ও নাগরিক শহীদ ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ প্রদান করতে হবে।
ঢাবি, জাবি, চবি, রাবিসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ দলীয় লেজুরভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদকে কার্যকর করতে হবে।
অভিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হলসমূহ খুলে দিতে হবে। যে সকল ছাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগহ্রন করেছে তাদের কোনো ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
জ্বালাও পোড়াও সহিংসতা সমর্থন করে না শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের আন্দোলনে যে কেউ যোগ দিতে পারে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের তৎপরতা এবং অপতৎপরতা উভয়েই কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা তাদের ব্যানারে মেনে নেবে না। উল্লেখিত দফাগুলো বাস্তবায়ন করলে তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরিবেশ তৈরী হবে বলে ধরে নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবে। আজ শনিবার কোটা আন্দোলনের কোন কর্মসূচী নেই বরং স্ব স্ব অবস্থানে থেকে কালো ব্যাচ ধারন করে দোয়া মোনাজাতের জন্য সকলকে আহবান করা হলো।