প্রশান্তি ডেক্স ॥ কোট বিরোধীরা বর্তমানে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে মুখোমুখি দ্বার করিয়ে দিয়েছে। মূলত এই কাজটি সু কৌশলে করেছে মুক্তিযোদ্ধবিরোধী শীবির। কিন্তু দু:ভার্গ্য আমাদের যে, এই কোটা প্রথায় দুটি ভাগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাধারণ থেকে খেটে খাওয়া ও সচেতন শিক্ষার্থীরা এই কাজটিই করে যাচ্ছে অবলিলায়।
মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু কোটা প্রথা চায়নি বরং বাংলাদেশ সৃষ্টির পর বঙ্গবঙ্গু শেখ মুজিবর রহমান এই সুযোগটি দিয়েছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ। কিন্তু ৭৫এর পট পরিবর্তনের পর থেকে বিগত ২৫টি বছর মুক্তিযোদ্ধারা কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি এবং নেয়ার সুযোগ ও সাহস কোনটিই ছিল না। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধা ও যুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই সুযোগটি পুন:বহাল করেন বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই ক্ষেত্রে তিনি গভেষনা করে দেখেন যে, এই সুযোগটি মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে গ্রহণ করা সম্ভব নয় বরং তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে তাদের নাতি-পুতিরা নিতে পারে।
এই ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শী এবং মেধা চর্চার ফসল হলো এই সিদ্ধান্তটি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কতিপয় জনতা যারা ছাত্রনামধারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে প্রতিবাদ এবং আন্দোলন গড়ে তোলে এই বলে যে, কোটার সংস্কার চায়। সেই প্রতিবাদ এবং সংস্কারকদের পক্ষে গিয়ে ২০১৮ সালে সরকার এই কোটা প্রথা বাতিল করে দেন। যাতে কোন অজুহাতে কাউকে ক্ষেয় প্রতিপন্ন করা না হয়।
সরকারের সেই সিদ্দান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে অধিকার ও ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আবেদন করেন এবং সেই আবেদনের পক্ষে সরকারের সিদ্দান্ত বাতিল হয়ে যায় এবং কোটা প্রথা পুনরায় চালু হয়। যার বিরুদ্ধে এখন ছাত্রসমাজ। কিন্তু কথা হলো সরকারতো এই কোটা প্রথার পক্ষে নয় বরং বিপক্ষে এবং বাতিলের পক্ষে। তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন কেন? বরং সরকার এবং কোটা বিরোধীরা যৌথভাবে একটি মেধাভিত্তিক ফয়সলা করাই ছিল শ্রেয়।
এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিয়েও মন্তব্য করে যাচ্ছেন। যা অনভিপ্রেত। তবে এই ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধারা যে ভাতা পায় তা রাষ্ট্র বা জনগণের টাকায় হয় না। বরং এই ভাতা তাদের অর্জিত সম্পদের আয় থেকেই তারা নিয়ে থাকেন। তবে এই ক্ষেতে সরকার শুধু বন্টন করে থাকেন।
আরো একটি বিষয় হলো যে, সাধারণ মানুষ বা ছাত্ররা বলেই বেড়াচ্ছে যে, তারা মুক্তিযোদ্ধা হলে আমরা কারা! এই প্রশ্ন খুবই সহজ যে, সাধারণ জনগণ। যদি আমাদের কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধে বিরোধীতা করে থাকেন তাহলে আমরা রাজাকার বংশধর। আর না করে থাকলে স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি। কেউ কেউ বলে থাকেন এখন যদি দেশ কোন যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাহলেতো আমরাও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবো। তাহলে কিভাবে আমরা রাজাকার হই। এই ভূল ব্যাখ্যাগুলো জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলমান দুর্যোগকে মহাদুর্যোগে পরিণত করেছে মাত্র। তাই এইসকল তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাতামাতি না করে বরং সকলেই নিজেকে তৃতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক ভাবতে এবং কার্যকর করতে শিখুন। আর এই ভাবা ও শিখার মাধ্যমই হলো মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা এবং তাদেরকে দেয়া সুযোগ সুবিধাগুলোকে মেনে নেয়া। এইক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার একটি বানী বা আয়াত উল্লেখ করছি “ তোমরা যেমন আশা কর ঠিক তেমনি আগে করে দেখাও।” হ্যা এই দেখানোতেই নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখি।
বিভাজন সৃষ্টি এবং অসম্মানজনিত কথা ও আচরণ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখি। কারণ আগামী দিনে আপনার এবং আমার জন্যও এমন সম্মান ও সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে আর এই সম্মান ও সুযোগকে অন্যরাও ঠিক আমি ও আপনি যেমন ভাবছি ও করছি সেই তালিকায় অন্যারা নিয়ে যাবে। তাই সুযোগ ও সম্মান এবং ক্ষমতা আল্লাহর কাছ থেকে আসে। আর আল্লাহর উপর ভরসা করেই আগামীর দিনগুজার করি। কারণ দিন ও রাত শেষে আবার তাঁরই কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে।