সারাদেশে কারফিউ: সেনা মোতায়েন এবং দুর্বত্তদের দেখামাত্র গুলি

প্রশান্তি ডেক্স ॥ দেশের মানুষের জানমাল ও সম্পদ রক্ষায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ২টা থেকে কারফিউ কার্যকর করা হয়েছে। কারফিউ চলাকালে সহিংসতায় জড়িতদের দেখামাত্র গুলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  প্রথম ধাপে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় ধাপে আজ দুপুর ২টা থেকে রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। এতে হাসপাতাল, এ্যাম্বুলেন্স ও গণমাধ্যমসহ সব জরুরী সেবা কারফিউর আওতামুক্ত থাকবে।

গত রাতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শীর্ষ নেতা এবং পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গভভবনে বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন স্পেন সফর বাতিল করা হয়েছে। গণভবনে দীর্ঘ বৈঠক শেষে আপেক্ষমান সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলে, ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে বিএনপি- জামায়াতের সন্ত্রাসীরা এসব ভয়াল সহিংসতার ঘটানা ঘটাচ্ছে। মানুষের জামনাল রক্ষায় দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান ১৪ দলের নেতারা।

তিনি বলেন, নাশকতাকারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি- জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা এ নৈরাজ্য চালাচ্ছেন। বিটিভি ভবনে আগুন, করাগারে হামলা, মেট্ট্রারেল এক্সপ্রেসওয়েতে হামলা ও সেতু ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, পিবিআই ভবন, পুরাতন স্বার্থ ভবন, ডিসি অফিসে হামলা করে সারাদেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বিএনপি-জামায়াত। সরকার কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেওয়ার পরও এই সহিংস আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাই দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সহিংসতায় জড়িতদের গুলি করার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে আজ প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানা গেছে। কারফিউ চলাকালে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে সেনাবাহিনী। এ ব্যাপারে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, কোটা সংস্কারের নামে যে ভয়াল নাশকতা চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত, এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। আমরা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে মানুষের জানমাল রক্ষায় কঠোর হাতে এসব সন্ত্রাসী দমন করার জন্য বলেছি। আমাদের ডাকের পেক্ষিতে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে এ কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনে সম্মত হন।

গণভবনে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ১৪ দলেল সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এর আগে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রায় ঘন্টাব্যাপী ১০ দলের নেতারা বৈঠক করেন। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে হাসানুল হক ইনু, শিরীন আখতার, দিলীপ বড়ুয়া, এস কে শিকদার, ডা. শহীদুল্লাহ, মোহাম্মদ জহির, ডা. আবদুর রশীদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোফাজ্জ্বল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরূল ইসলাম, জাহাঙ্গির কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, অ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট থেকে প্রায় এক ঘনটার ১৪ দলের নেতারা বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা শেষে সবাই একযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে যান। পরে জাতিয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু গণভবনে গিয়ে বৈঠকে যোগ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.