প্রশান্তি ডেক্স॥ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মিশনের সামনে বিক্ষোভ করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই সব দেশে অবস্থিত পাকিস্থানি কমিউনিটি সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে এবং সেখানে স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্র, জঙ্গিগোষ্ঠী অনেক জায়গায় পাকিস্থান কমিউনিটির সহায়তা নিয়েছে। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।’
গত বুধবার (২৪ জুলাই) বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় স্থাপনা পরিদর্শন করানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ওই পরিদর্শনে ২৩টি দেশের রাষ্ট্রদূতসহ ৪৯টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার মধ্যে মিরপুর ১০ নম্বরে মেট্রোরেল স্টেশন, সেতু ভবন, বিটিভি ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদফতর রয়েছে।
পরিদর্শনের পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেসে আমাদের মিশনের সামনে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে পাকিস্থানিরা যোগ দিয়েছে এবং বেশ কিছু পাকিস্থানি বিক্ষোভ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। একইভাবে আমাদের বিভিন্ন মিশনের সামনে যে বিক্ষোভ হয়েছে, এই বিএনপি-জামায়াত চক্র পাকিস্থান কমিউনিটির সহায়তা নিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সেই সহায়তা নিয়ে তারা বিক্ষোভ করছে এবং গুজব ছড়াচ্ছে।’
পাকিস্থানিদের বিক্ষোভে জড়িত থাকার বিষয়টি সরকারিভাবে পাকিস্থানের কাছে তোলা হবে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি লোকাল ইস্যু। লস অ্যাঞ্জেলেসে যারা ছিল, তারা এক্সপ্যাট্রিয়ট পাকিস্থানি এবং তারা পাকিস্থানের ভেতরে থাকে না।’
মধ্যপ্রাচ্যে গ্রেফতার : মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে এবং সেই বিক্ষোভের পর তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আরব আমিরাতে ৫৪ জনকে শাস্তি দিয়েছে এবং তিন জনকে যাবজ্জীবন দিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘একইভাবে আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে, দন্ড দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আমাকে অবহিত করেছেন যে তারাও সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শকারীদের গ্রেফতার করেছে।’
সৌদি আরবে কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে জেনে বলতে হবে। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ আইনে করেছে, শাস্তি দিয়েছে তাদের অভ্যন্তরীণ আইনে।’
আরব আমিরাত শ্রমবাজার খোলা : গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত তাদের শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, সংবাদটি মিথ্যা। তিনি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে একটি সংবাদ এসেছে যে আরব আমিরাত আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করেছে। এটি একটি ভুয়া সংবাদ।’
‘আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের মহাপরিচালক কথা বলেছেন এবং তারা জানিয়েছে এ ধরনের সিদ্ধান্ত তারা নেয়নি,’ বলেন মন্ত্রী।
কতজন মারা গেছে : পরিদর্শনকালে কতজন মারা গেছে, এটি কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটি সবাই জানতে চায়। সেটি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
বিভিন্ন অপারেশনে জাতিসংঘের লোগো-সংবলিত গাড়ি ব্যবহার করার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের কোনও গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমি পরিষ্কার করে বলছি, এগুলো জাতিসংঘ শান্তি মিশনে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল, লোগোটা মোছা হয়নি ভুলে। লোগোগুলো এখন মুছে দেওয়া হয়েছে।‘
কোটা আন্দোলন নিয়ে বিদেশি দূতাবাসের কাছে ব্রিফিং নোট পাঠানো হয়েছে এবং সেটির বিষয়ে দূতাবাসগুলো যেন গণমাধ্যমে কোনও বিবৃতি না পাঠায়, সে বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ’তাদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে এবং তারা সেটি মেনে চলেছে।’
বিদেশি কূটনীতিকদের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শনের সময়ে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং কূটনীতিকরাও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘অতীতে আপনারা দেখেছেন, এ ধরনের কোনও কিছু ঘটলেই আমাদের কূটনীতিকদের প্ররোচিত করা হতো কথা বলার জন্য। এবারে এটি আপনারা করেননি।’
কূটনীতিকরা স্তম্ভিত: বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় স্থাপনা পরিদর্শনের পর তারা স্তম্ভিত হয়ে যান বলে জানান হাছান মাহমুদ।
পরিদর্শনের পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল আরও কয়েক জায়গায় তাদের নিয়ে যাওয়ার। বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, ডাটা সেন্টার। কিন্তু রাস্তায় প্রচন্ড ট্রাফিক ছিল এবং মাঝখানে বৃষ্টি হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা স্তম্ভিত। তাদের সবাই জানিয়েছেন যে তারা বাংলাদেশের পাশে আছেন।