প্রশান্তি ডেক্স॥ ‘চলমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান না হলে আন্দোলন শেষ হবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এটা (আন্দোলন শেষ হওয়া) কখনও হয়নি, অতীতেও হয়নি। আপনি যদি অতীতের ইতিহাস দেখেন, পাকিস্থান আমলের ইতিহাস দেখেন, সেখানেও বহুবার আন্দোলন এসেছে। আন্দোলন এক পর্যায়ে স্থিমিত হয়েছে। তারপর আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে।’ গত বুধবার (২৪ জুলাই) বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এবারকার আন্দোলন তো একটা “আইওপেনার”। এবারকার আন্দোলনে সমস্ত মানুষ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আপনারা নিজেরাও অনেক রিপোর্ট করেছেন। এক বাচ্চা ছেলে ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়স সে তার মায়ের কাছে বলে চলে এসেছে যে আমি যাবো, সাধারণ মানুষ বেরিয়ে এসেছে, ওদের সঙ্গে আমাদের যেতে হবে।’
‘আজ একদিকে কোটা আন্দোলন ছিল শিক্ষার্থীদের, অন্যদিকে সরকারের চরম ব্যর্থতা ছিল সর্বক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে। সবখানে দুর্নীতি নিজেরাই করে তারা এত ব্যর্থ হয়েছে যে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সে কারণেই জনগণের পুঞ্জীভূত যে ক্ষোভ, তারই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। হ্যাঁ, সাময়িকভাবে সেনাবাহিনী নামিয়ে, দমন-পীড়ন করে, নির্যাতন-নিপীড়ন করে এটাকে হয়তো থামিয়ে দিতে পারে। এটার যদি রাজনৈতিক সমধান না করে, তাহলে কখনও এটার শেষ সমাধান হবে না,’ বলেন ফখরুল।
রাজনৈতিক সমাধানটা কী, এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল স্পষ্টভাষায় বলেন, ‘রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে কারফিউ দেওয়ার পর থেকে সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে একটা জিনিস প্রমাণ করতে চাইছে যে আন্দোলন, বিভিন্ন হত্যার ঘটনা, ভাংচুর সবকিছুর জন্য দায়ী হচ্ছেন তারেক রহমান সাহেব। প্রতিটি কথার মধ্যে এটা আসছে। এ থেকে বোঝা যায় যে তারা তারেক রহমান সাহেবকে হেয়প্রতিপন্ন করা, তার ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা এবং জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়া এবং একই সঙ্গে বিএনপিকে দায়ী করা, বিরোধী দলকে দায়ী করা। সরকারের এসব বক্তব্য অমূলক, বিভ্রান্তিকর, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন ‘এখনও আছে’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোটা সংস্কারের আমাদের সমর্থন ছিল, এখনও আমরা দিচ্ছি। তাদের যে দাবিগুলো ছিল, তা এখনও পূরণ করা হয়নি। তাদের দাবি ছিল ৮ দফা। শুধু কোটা নয়, আরও যে দাবি আছে, অবশ্যই সেসব দাবি সরকারের পূরণ করা উচিত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যতটুকু জানতে পেরেছি, আমাদের প্রায় দুই হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারা, অঙ্গসংগঠনের নেতারা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা, বিরোধী দলের নেতা গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর সাহেব, জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পারোয়ার সাহেব, ডা. আবদুল্লাহ আবু তাহের সাহেবসহ অনেক জাতীয় নেতাকে তারা গ্রেফতার করেছেন।’ এ সময় বিএনপি মহাসচিব দলের নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কত জন এই আন্দোলনে মারা গেছে, কত জন আহত হয়েছে, এটা তারা (সরকার) জানাচ্ছে না। উদ্দেশ্য হচ্ছে যে ওরা গোটা জাতিকে ভ্রান্ত ধারণা দিতে চায়। তারা কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিষয়টা পুরোপুরি বাদ দিয়ে শুধু সরকারি স্থাপনায় হামলা-ভাংচুরের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো সামনে আনতে চায়। এখানে বিএনপির ওপর দোষ চাপাতে চায়।’
বিএনপির ওপর নাশকতার যে অভিযোগ করছে সরকার, তাকে ভিত্তিহীন দাবি করে মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের সঙ্গে থাকা আর নাশকতার মদদ দেওয়া এক জিনিস নাকি? নাশকতার মদদ তো দিচ্ছেন তারা (সরকার)। তারা চাচ্ছেন যে এখানে নাশকতা হোক, প্রবলেম হোক।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির ৪০ বছরের ইতিহাসে নেই যে বিএনপি রাষ্ট্রীয় কোনও স্থাপনার ওপর আক্রমণ করেছে, কোনও সমস্যা তৈরি করেছে আপনি পাবেন না খুঁজে। আজ পর্যন্ত যত আন্দোলন হয়েছে, কোথাও কোনও রকমের রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় বিএনপি আক্রমণ করেনি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, আমরা কারফিউ প্রত্যাহার চাই। জনগণের শান্তির স্বার্থে কারফিউ অবশ্যই প্রত্যাহার করা উচিত।’