রাজধানীর রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে অক্লান্ত শিক্ষার্থীরা

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরে সৃষ্ট সহিংসতার শুরুতেই হঠাৎ রাস্তা থেকে, থানা থেকে পুলিশ সরে যেতে থাকে। পরের দিন ঢাকায় বন্ধ থাকা সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে দেখা যায় সড়কে বিপত্তি। কোথাও কোনও ট্রাফিক পুলিশ নেই। আবারও শিক্ষার্থীরা নেমে আসেন। গত দুদিন অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিটি সিগন্যালে তারা দায়িত্ব পালন করছেন।

শিক্ষার্থীদের এই প্রচেষ্টা ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে রাজধানীবাসীকে। ২০১৮ সালে সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত সংঘটিত হয় একটি আন্দোলন। সে বছর ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয়। একই ঘটনায় ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এই সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের প্রতিবাদ দিয়ে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ পরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিক্ষোভও লাঠিচার্জ দিয়ে থামাতে গেলে আরও বেগবান হয় এবং শিক্ষার্থীরা সেসময় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে প্রমাণ করে- নিয়ম মানলে এবং বৈধ গাড়ি চললে অবশ্যই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।

গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) কারফিউ উঠে যাওয়া ও স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু হলে আবারও তারা রাস্তায় নেমে আসেন। ডান দিকের গাড়ি ডানে রাখা, বামে যেতে হলে কীভাবে যাবেন ইশারায় দেখিয়ে দেওয়া, সিগন্যালের আগেই গাড়ি দাঁড় করানোর চেষ্টা চোখে পড়ার মতো।

কী ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করলেন জানতে চাইলে এক শিক্ষার্থী বলেন, বেশিরভাগই কথা শোনেন, কিন্তু সবার অনেক তাড়া, অনেকদিনের অভ্যাস। কিন্তু ঠিক হয়ে যাবে।

পাশে থাকা আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ট্রাফিক রুল বিষয়ে আমরাও সবাই সব জানি এমন না। গাড়ি চলার কিছু নিয়মও আছে। আমাদের মধ্যে যারা সেটা জানেন না তাদেরকে লাইন ঠিক রাখার কাজ দেওয়া হয়েছে। হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালালে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী জরিমানা হিসেবে ‘৫মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখে’ বুঝিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।

রাস্তায় এলোমেলো গাড়ি পার্কিংকে আরেকটি সমস্যা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলছেন, গাড়ি পার্কিংয়ের যথেষ্ট জায়গা নেই বলে রাস্তার বড় অংশে গাড়ি রেখে দিলে কীভাবে হবে। যারা গাড়ি ব্যবহার করেন তারা যদি হেল্প করেন তাহলে সেটারও সমাধার আনা সম্ভব। আমরা এই বিশেষ পরিস্থিতিতে আপাতত সিগন্যালগুলোতে যেন গাড়ি ঠিকঠাক মতো চলে সেটাতে মনোযোগ দিচ্ছি, সবাই হেল্প করছেন।

৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার জরিমানা কাটিয়ে মোটরবাইক নিয়ে রওনা দেওয়া সেই ব্যক্তি বলেন, আমার হেলমেট থাকলেও আমার সঙ্গে থাকা ব্যক্তির ছিল না। তারা আমাকে জরিমানা হিসেবে ৫ মিনিট দাঁড়াতে বলেছেন। আমি তাদের সম্মান দেখিয়ে সেখানে ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে বন্ধুটিকে রেখেই একা রওনা দিয়েছি।

রাজধানীর বেশকিছু জায়গাতে রাস্তায় অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের খাবার ও পানি দিয়ে সহায়তা করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে একজন বলেন, আমি কিছু দিলে তারা খাবে কিনা সেটা জানার জন্য এসেছি। টিভিতে দেখলাম ওরা দায়িত্ব পালন করছে। আমারও দুই ছেলে আছে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত আয়াতুল্লাহ নিজে গাড়ি চালিয়ে অফিস থেকে ফিরছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দেখেন ওরাই তো রাস্তার পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমেছে, আপনি আমি তো নামিনি। ২০১৮ সালেই দেখেছি, ওরা পারে। ওরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রটা ধরতে পারবে না হয়তো, কিন্তু মন থেকে করছে তো, সমস্যা হবে না।

সিগন্যালের ডানের গাড়ি বাম দিকে গিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাখতো। কাল থেকে বামে যেতে সমস্যা হচ্ছে না বলে খুশি সায়মা হক। তিনি বলেন, এলোমেলো গাড়ি আমাদের দুর্ভোগের কারণ। রাস্তায় বাসগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড়াতে পারছে না। এই বাচ্চারা যদি এটা করতে পারে, ট্রাফিক কেন পারে না। পরিবর্তন নিশ্চয় আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.