প্রশান্তি ডেক্স ॥ প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের তিন দিন পর গঠিত হয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও ১৬ জন উপদেষ্টা।
তাদের মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। কিন্তু এসব উপদেষ্টা প্রত্যেকেই তাদের অবস্থানে সুনামের সঙ্গে পরিচিত। প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টারা বর্তমানে কে কী করছেন, তা তুলে ধরা হলো।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস : গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শিক্ষকতা পেশায় থাকা অবস্থায়ই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক। পরে ওই ব্যাংককে সঙ্গে নিয়ে শান্তিতে নোবেল পান ২০০৬ সালে।
শুধু তাই নয়, বিশ্বের ২৪টি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬১টি সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন তিনি। তার ঝুলিতে আছে ৩৩টি দেশের ১৩৬টি সম্মাননা। এর মধ্যে আছে ১০টি দেশের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। এখন পর্যন্ত নোবেল শান্তি পুরস্কার, ইউনাইটেড স্টেটস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পাওয়া মাত্র সাত ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন। এর বাইরেও তিনি বেশকিছু ইউরোপীয় দেশের রাজকীয় সম্মাননা পেয়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বেও সুনাম কুড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজ দেশেই গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ছিলেন কোণঠাসা। কর্তৃত্ব হারিয়েছিলেন নিজের প্রতিষ্ঠিত সেই গ্রামীণ ব্যাংকের।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ: বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নবম গভর্নর ছিলেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি ২০০৫ সালের ১ মে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন এবং ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর (দরিশ্রীরামপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ড. আসিফ নজরুল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন ড. আসিফ নজরুল। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি লেখক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলামিস্ট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তাকে নিয়মিত সমসাময়িক বিষয় নিয়ে টক শোতে দেখা যায়।
আদিলুর রহমান খান : তিনি একজন আইনজীবী এবং সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত আদিলুর রহমান খান। ১৯৯৪ সালে ‘অধিকার’ নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
এ এফ হাসান আরিফ : তিনি একজন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল। ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি, এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়, বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এ এফ হাসান আরিফ।
তৌহিদ হোসেন: তিনি বাংলাদেশের একজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। ২০০৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ৮ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন তিনি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : তিনি একজন আইনজীবী এবং পরিবেশবিদ। পরিবেশকর্মী হিসেবে তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মো. নাহিদ ইসলাম : মো. নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। তিনি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করছেন। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। এরপর সেখান থেকে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ছাত্র অধিকার পরিষদের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। রাজধানীর নাখালপাড়া হোসাইন আলী হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে রাজনীতি শুরু করেন। সর্বশেষ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সূচনার পর তিনি সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন : তিনি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হিসেবে তিনি বেশ পরিচিত। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কলাম লেখেন নিয়মিত।
সুপ্রদীপ চাকমা: সুপ্রদীপ চাকমা একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। ২০২৩ সালে ২৪ জুলাই তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত ছিলেন সুপ্রদীপ চাকমা। এ ছাড়া রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা এবং কলম্বোতে বাংলাদেশ মিশনেও তিনি বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।
ফরিদা আখতার : বেসরকারি সংস্থা উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার। পাশাপাশি তিনি একজন লেখক, গবেষক ও আন্দোলনকর্মী।
বিধান রঞ্জন রায় : বিধান রঞ্জন রায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি লেখালেখির সঙ্গেও জড়িত।
আ ফ ম খালিদ হাসান : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আ ফ ম খালিদ হাসান। পেশায় তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক হিসেবে ছিলেন।
নূর জাহান বেগম : গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নুরজাহান বেগম।
শারমিন মুরশিদ : সমাজ কল্যাণ সংস্থা একটি অধিকারভিত্তিক সংগঠন ‘ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফারুক-ই-আজম : ফারুক-ই-আজম ‘বীর প্রতীক’ পদবির মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নৌ-কমান্ডো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।