কসবায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি॥  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দিন দিন বৃদ্ধি  পাচ্ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। যে বয়সে একটি শিশু বই -খাতা নিয়ে স্কুলে থাকার কথা তা না হয়ে শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কলমের বিপরীতে হাতুড়ি কাঁধে এবং মাথায় বোঝা। এদেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে চরম  শিশু আইনের অবমাননা।

শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এ সকল শিশু শ্রমিকের অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর লোক কম শ্রমে তাদের টাকা কামানোর লোভ দেখিয়ে তাদের শ্রমকে কাজে  লাগাচ্ছে। এ সমস্ত শিশু শ্রমিকের বয়স ৭ থেকে ১৪  বছরের মধ্যে। এ সকল শিশু অভাবের তাড়নায় কাজ করলেও তাদের ন্যায্য পারিশ্রম দেওয়া  হয়না বলে জানা  যায়। শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশিষ্টজনদের মতে আগামী কয়েক বছরে এর সংখ্যা হবে দ্বিগুন। সরেজমিন ঘুরে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে উপজেলা শিশু শ্রমের অন্যতম কারণ হচ্ছে অভাব অনটন এবং অর্থনৈতিক সমস্যা। এই উপজেলার অধিক সংখ্যক নারী পুরুষ বেকারত্বের শিকার। এমন পরিস্থিতিতে বাবা-মা তাদের পরিবারের জন্য অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে না পারার কারণে বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা শিশুদের শ্রমে উৎসাহিত করছেন। শিশু শ্রমিকের বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে ভূমিহীন পরিবার, নিম্ন আয়ের  মানুষ, মূতশিল্পীদের পরিবার, জেলে পরিবারের ছেলে মেয়েরাই অভাব অনটনে শিকার হয়ে শ্রমের পথে  পা বাড়াচ্ছে। এ উপজেলার শত শত পরিবার দিনমজুরের পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর শিশু শ্রমিকের হার বেড়েই চলছে। একমুঠো ভাতের জন্য কোমলমতি শিশুরা ওয়েল্ডিং কারখানা,ওয়াকসপ, চায়ের দোকান, মুদির দোকান, ক্ষেত খামারে ও ইট ভাটায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অমানবিক পরিশ্রম করে যাচ্ছে। যেখানে এ সকল শিশুদের হাতে থাকার কথা ছিল কলম বইসহ শিক্ষাসামগ্রী, তা না হয়ে তাদের হাতে কলমের বদলে নিতে হচ্ছে হাতুড়ি  কাঁধে তুলে  নিচ্ছে ভারী  বোঝা,  মাথায় বড় বড় বস্তা।  এভাবেই কঠোর পরিশ্রমের ফলে তারা অল্প বয়সেই বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সে শারীরিকভাবে শক্তি হারিয়ে ফেলছে  এবং অল্পবয়সেই  অকাল মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। অনেক শিশু তাদের পরিবারের অভাব অনটনের কারণে লেখাপড়া না করে পিতা মাতার সাথে ইট ভাটা, ধানের চাতালে, জমিতে বিভিন্ন প্রকার কাজ করছে। তিন বেলা তিনমুঠো ভাত খাওয়ার জন্যই অমানসিক পরিশ্রম করে। যে বয়সে তারা বই খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে তিন বেলা তিন মুঠু ভাতের আশায় আর সাংসারিক চাপে পড়ে এসব কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এমনি একজন রিক্সা চালক  অপু ( ১২ বছর) তার  সাথে প্রশান্তি প্রতিনিধি কথা বললে,  সে জানায় আমরা কি আর শখে করে রিক্সা চালাই। আমাদের কি মনে চায় না অন্যসব ছেলেদের মত বই-খাতা কলম নিয়ে  স্কুলে যেতে, হাসি খুশি আর আনন্দে দিনগুলো কাটাতে? ভাগ্য আর কড়াল গ্রাস  আমাদের এখানে টেনে এনেছে। আমার বাবা টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে ছট- পট করছে। সংসারের সব দায়িত্ব এখন আমার উপর। তাই বাধ্য হয়ে রিক্সা চালাই। নয়ত বাবা-মা সহ আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের বড় বড় আত্মীয়-স্বজন আছে, কিন্তু আমরা গরিব বলে তারা আমাদের পরিচয় দিতে চায় না। উনারা যদি আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন তাহলে আমার এ বয়সে  রিক্সা  চালাতে হতো না। আমার তো লাখ লাখ টাকা চাইনা। দামি গাড়ি কিংবা বাড়ি চাইনা। আমাদের সাহায্যে যদি বিত্তবানরা এগিয়ে  আসতো তাহলে আমাদের এই কষ্ট হতো না। আমার মত ১২ বছর বয়সে রিক্সা  টানতে হতো না। জানা যায় অপুর গ্রামের বাড়ি শেরপুর।

এ ব্যাপারে কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: শাহরিয়ার মুক্তার বলেন -কসবা শিশু শ্রমিকের সংখ্যা তেমন নাই তবে উপজেলাতে আমাদের কমিটি আছে  অতি শীঘ্রই আমি কমিটি নিয়ে বসব এবং শিশু শ্রমিকের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে তাদেরকে কিভাবে স্কুলে পাঠানো যায় সেই ব্যবস্থা নিব ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.