প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স। গত বুধবার রাত ১২টা পার হতেই কলকাতার একাধিক স্থানে মিছিল থেকে দেশাত্মবোধক গানের সুর ভেসে আসে। জাতীয় পতাকা কাঁধে মিছিলে যোগ দেন অনেকেই। যাদবপুর থেকে দিঘা, দিনাজপুর থেকে অ্যাকাডেমি চত্বর, প্রতিবাদের ভাষা এক। কোনও রাজনৈতিক রঙ না নিয়েই নাগরিক সমাজ ঐকব্যবদ্ধ হলে, নারীরা একজোট হলে কী ছবি উঠে আসতে পারে, তা দেখলো কতলাতার গত বুধবারের রাত।
আর জি কর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে হত্যার প্রতিবাদে ‘রাত জাগো’ কর্মসূচি পালন করেন নারীরা। রাত সাড়ে এগারোটার সময় বালুরঘাট থানা মোড়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রথমেই ছিল মশাল প্রজ্জ্বালন ও প্রতিবাদী গান। পরবর্তীতে মানব বন্ধনও হয়।
মশাল প্রজ্জ্বালন: সৌরসেনী, চৈতি ঘোষাল, মৌসুমী ভৌমিকসহ একাধিক তারকাকে দেখা গেছে যাদবপুর এইট-বিতে। আর জি কর কান্ডে ‘দখল করো দখল করো’র ডাক দিয়ে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুর, মুম্বাই, কানপুরসহ গোটা দেশে কার্যত অকাল দেবীপক্ষ।
অ্যাকাডেমি চত্বরে রাত বাড়তেই নারীরা নেমে যান রাত দখলে। দিকে দিকে শোনা যায় উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি। ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা।
স্লোগান: মেয়েদের রাত দখলের এই ডাকে সাড়া দিয়েছে গোটা বাংলা। এই উদ্যোগের নেপথ্যে ছিলেন রিমঝিম সিংহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা তার পোস্টে সাড়া দিয়ে গত বুধবার রাত দখলে নেমেছেন নারীরা। রিমঝিম বলেন, ‘আমাদের সবার মধ্যেই ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই আমরা জড়ো হয়েছি। বিচার তো আমরা অবশ্যই চাইব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার।’ তিনি বলেন, ‘মূলে গিয়ে শোষণের প্রত্যেকটা কারণকে তুলে ধরা দরকার।’
রাত ১১.৫৫ মিনিট থেকে ‘মেয়েরা রাত দখল করো’র সমাবেশ শুরু হয়। যাদবপুর এইট বি, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস, কলেজ স্ট্রিজ চত্বর ছাড়াও কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে রাতভর এই প্রতিবাদ মিছিল চলে।
রাত যত বাড়ছে কলকাতা ততই সরগরম হয়ে ওঠে। অ্যাকাডেমি চত্বর, যাদবপুর এইট বি, আরজি কর এর সামনে সর্বত্রই একই ছবি। জমায়েত শুরু। যার আহ্বানে এই মিছিল সেই রিমঝিমও যাদবপুর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে যান।
যাদবপুর বাস স্ট্যান্ড: এদিকে, ১৪ আগস্ট রাতে ঘড়ির কাটা মধ্য রাত পার করতেই হঠাৎ আন্দোলনের ছন্দ কাটে দুষ্কৃতকারীদের তান্ডবে। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ হাসপাতালে পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙে কয়েক হাজার দুষ্কৃতকারী। আন্দোলনকারীর বেশেই হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে তান্ডবলীলা চালায় তারা।
পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙচুর: প্রথমেই নিশানা করা হয় জরুরি বিভাগ ভবনটিকে। নিচতলা থেকে শুরু করে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ভাঙচুর করা হয়। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড, নার্সিং স্টেশন ভেঙে তছনছ করা হয়। এমনকি সেমিনার হলেও ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করে দুষ্কৃতকারীরা। সেখানে তিলোত্তমার ওপরে নারকীয় অত্যাচার হয়েছিল।
হাসপাতালের ভেতর ভাঙচুর : হাসপাতালের একের পর এক সিসিটিভিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অনেকের অভিযোগ, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় হাসপাতালের ভেতর এই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। শুধু হাসপাতালই নয়, ভাঙচুর-হামলা করা হয়েছে পুলিশের ওপরও। দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশও লুকাতে বাধ্য হয়।
আহত পুলিশ : আর জি কর কান্ড নিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে বেহালায় প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনা থেকে যদি ভাবেন এখানে ক্ষমতা দখল করবেন। শুনে রাখুন, আমি ক্ষমতার মায়া করি না। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’