সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতনের দ্বারা উন্মোচিত হয়েছে নতুন অধ্যায় এবং সুযোগ সন্ধানীদের মুখোশ। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফসল হলো হাসিনার পতন এবং এর তৎপরবর্তী কর্মকান্ড। তবে আশার কথা হলো দেশের মানুষ এবং দলীয় লোকজন প্রথমে এই ঘটনাকে ভালবাবে মেনে না নিলেও এখন এই অবস্থানকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে এবং একটি সুন্দর আগামীর কল্যানকামী বৈষম্য বিরোধী বাংলাদেশ দেখতে প্রত্যাশা শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা যখন আইএমএফ এর কাছ থেকে শর্তযুক্ত লোন নেয়া শুরু করে তখন থেকেই তাঁর পতন শুরু হয়েছে। অহৎকারী এবং দাম্বিকতার বেড়াজালে এবং একগুয়েমিতে যখন তিনি নিজেকে আবদ্ধ করেছেন তখন থেকেই তাঁর পতন শুরু হয়েছে। আমরা এবং আমাদের এই দুটি শব্দ বিলিন করে যখন আমি করেছি, করে দিয়েছি এবং ইত্যাদিকে প্রচারণায় আনয়ন করেছেন তখনই তাঁর পতন শুরু হয়েছে। বাহাবা কুড়ানোর লক্ষ্যে নিজ দলের লোকদের যখন বিভিন্নভাবে সাজা এবং হত্যা, মামলা এবং নির্যাচন করা শুরু করেছেন তখন থেকেই তাঁর পতন শুরু হয়েছে। তাঁর মন্ত্রী, এমপি এবং বিভিন্ন পদাধিকারীগণ দ্বারা নির্যাতন এবং নিপিড়নের স্বীকারে পরিণত হওয়াদের বিচারহীনতায় এবং ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা থেকেই তাঁর পতন শুরু হয়েছে। যোগ্যদেরকে বঞ্চিত করে সম্মানিদেরকে সম্মান থেকে বঞ্চিত করে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা থেকেই তাঁর পতন শুরু হয়েছে।
প্রশাসন এবং দলে অধিষ্ঠিতদের নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার এবং প্রয়োজন ফুড়ালে ছুড়ে ফেলে দেয়া থেকেই তাঁর পতন শুরু হয়েছে। দল ও জোট গঠনে গড়িমসি এমনকি দল ও জোট বড় করার প্রয়োজনে সকলকে কাছে ডেকে অপমান এবং অযতœ ও অবহেলার কারণে তাঁর পতন শুরু হয়েছে। নিজের বুদ্ধির দ্বারা এবং পরামর্শকদের ভুল পরামর্শ ও ভুল ব্যাখ্যা এমনকি পরিস্থিতির ভুল তথ্য উপস্থাপনের দ্বারা তাঁর পতন শুরু হয়েছে। দলীয় ঐক্যে ভিবেদ, দলীয় জোটে বিভেদসহ সরকারী সংস্থাগুলোর অ-জবাবদিহিতার সমন্বয়ে পতনের শুরু হয়েছে।
অন্যায়ের ষ্টীম রোলাড়ের নির্যাতন যখন একগুয়েমিতে জনআকাঙ্খার বিপরিতে গিয়ে পতনের সূত্রপাতের আগুনে ঘি ঢেলেছেন ঠিক তখন থেকেই তাঁর পতন শুরু হয়েছিল। বিরোধীদল এবং নিজ দলের কর্মী সমর্থকদের দুর্দশা নিয়ে নিজে তামাশা করেছেন। স্বজনহারাদের মনের আকুতি তিনি বুঝতে ভুল করেছেন। নিজের অনুভুতি দিয়েও তিনি বিচার করতে অক্ষম হয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতি এবং লাগামহিন অর্থনীতি ও ডলার সংকটের মাধ্যমে তাঁর পতন শুরু হয়েছিল। বিদেশীদের বন্ধুত্বের বিপরীতে শত্রুতে পরিণত করা এমনকি অসম্মান করে বক্তব্য দেয়ার সময় থেকেই তাঁর পতন শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বানিজ্যে বৈষম্যের বেড়াজাল ও পানি বাণিজ্যের বেড়াজাল সৃষ্টির মাধ্যমেও তাঁর পতন শুরু হয়েছে। ঐসকল বিষয়ের সঙ্ঘে তাঁর চারিপাশে সকল চাটুকারের আস্ফালন এবং এই আস্ফালনের সুত্রপাতে তাঁর পতন শুরু হয়েছে। অতি উৎসাহি ও স্বার্থপর লোভাতুর শ্রেণীর জাগরণে তাঁর পতন শুরু হয়েছিল। একদিনে এবং একটি ইস্যুতে তাঁর পতন হয়নি বরং হাজারো ইস্যুতে ১০ বছরের বেশী সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই তাঁর পতন হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলন এবং কোটা বিরোধীরা শুধুই ইস্যু এবং অবলম্বন মাত্র। তাদের হাত দিয়ে সফলতাটুকু অর্জিত হয়েছে কিন্তু এর সকল দায়-দায়িত্ব হাসিনা সরকারের। কারণ তারা নিজেরাই এই পতন শুরু করেছেন এবং উপহারস্বরূপ ছাত্রদের হাতে তুলে দিয়েছেন নিরুঙ্কুস বিজয়। গায়ের জোর. মনের জোর এবং অন্যায় দ্বারা কোনদিন সম্মান, ক্ষমতা এবং সুরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা ধরে রাখা যায় না। অতিতেও যায়নি এবং বর্তমানেও নয় এমনকি ভবিষ্যতেও যাবে না।
এই পতনের মধ্যমে মিরজাফরদেরও উৎপত্তি হয়েছে এবং তাদের মিরজাফরীতে হাসিনা সিংহাসন চ্যুত্য হয়েছেন এবং নতুন অজানা অশনিসংকেত সিংহাসন আরোহণ করেছেন। তবে জন প্রত্যাশ ও জন আকাঙ্খা এমনকি খোদায়ী অভীপ্রায় বাস্তবায়ন ও পরিপূর্ণতা দিয়ে এগিয়ে গেলে সৃষ্টিকর্তার গৌরব হয়ে প্রশংসা ও মহিমা ঘোষিত হবে। আর স্থায়ী হবে অশনিসংকেতের দ্বারা জন আকাঙ্কার স্থায়ীত্ব। জনগণ পাবে সাম্য ও ন্যায় বিচার আর নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা। এই সরকার এবং জনগণ একসুত্রে গেঁথে তুলা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তবে বিভাজন বন্ধ করে সার্বজনীন ঐক্য সমৃদ্ধকরণে সরকারকে মনযোগী হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতায় অগ্রসর হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। নতুবা হাসিনা সরকারের পরিনতির কাছ থেকে শিক্ষা নেয়ার অনুরোধ রাখছি। সময় ও ¯্রােত এবং সৃষ্টিকর্তার বিচার সবসময় ছিল এবং আছে ও থাকবে। তাই তিনি তাঁর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করেন ও করেছেন এবং আগামীতেও করবেন। সকলের মঙ্গল হউক এবং আগামীর ইতিবাচক সকল প্রত্যাশা পূরণ হউক। আগামীতে এই সংক্ষিপ্তাকারের লিখার বিষদ বিবরণসহ বিশ্লেষণ প্রকাশ করার আশা পোষণ করছি।