অধপতন

পতন আর অধপতন একই সুত্রে গাঁথা দুইটি নাম মাত্র। এই পতন বা অধপন হওয়ার পিছনে কি কি কারণ রয়েছে বা থাকতে পারে তার সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনার নিম্নরূপাকারে লিপিবদ্ধ করতে চাই।

সৃষ্টিকূলের অধপতনের জন্য স্ব স্ব জাতি ও গোত্র এবং বংশ ও পরিবার এমনকি ব্যক্তিসকল দায়ী। প্রথমে এই অধপতনের জন্য দায়ী খোদার বা সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়কে গুরুত্ব না দেয়া। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্কের ফারক সৃষ্টি করা। সৃষ্টিকর্তার সকল নিয়ামতকে অস্বিকার করা এমনকি নিজের উপর নিজেরই অধিপত্য বিস্তার করা। এইসকল যখন একটি মানুষ অথবা সৃষ্টিকূলকে ভর করে ঠিক তখনই তার পতনের গোড়াপত্তন শুরু হয়।

অতপতন বা পতনের গোড়াপত্তন শুরু হওয়ার সময় থেকেই এই বিষয়গুলো লক্ষণীয়। প্রথমত নিজের উপর আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া। অন্যের কানপড়া বা কানকথা শুনা। অন্যের ক্ষতি করা। অন্যের সমালোচনা করা। মিথ্যার উপর দাড়িয়ে বা ভর করে পথ চলা। নিজের প্রয়োজনে মানুষকে বা সৃষ্টিকূলকে অথবা সৃষ্টিকর্তাকে ব্যবহার করা। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া বা ভুলে যাওয়া।

অহংকার ও দাম্বিকতায় মশগুল হওয়া; আমি এবং আমিত্বে পরিপূর্ন হওয়া। অন্যের পরামর্শ ও ইতিবাচক সমালোচনা গ্রহণ না করা বা আমলে না নেয়া। সত্যকে গরুত্ব না দেয়া। মোট কথা নিজের কাছে যা ভাল মনে হয় সেইদিকে গভীর মনযোগ দিয়ে অগ্রসর হওয়া। অন্যকে গুরুত্ব না দেওয়া এমনকি নিজের ভুলগুলোক না দেখা বা ভুল না ভাবা। নিজের সীমিত জ্ঞানের উপর ভর করে প্রকৃত জ্ঞান ও পথদর্শনকে অবজ্ঞা করা। সততাকে বাইপাস করে মিথ্যার বেড়াজালে অবদ্ধ থাকা।

ভালকে ভাল বলা এবং মন্দকে মন্দ বলাতে ফারাক খুজে না পাওয়া। সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদকে অস্বিকার করে নিজস্ব আশির্বাদের উপর ভসরা করা। সকল সময় আমি করেছি, আমি দিয়েছি, আমি পদক্ষেপ নিয়েছি, আমি করব এবং সবকিছুতেই আমিত্বকে গুরুত্বারূপ করা। অহংকার দাম্বিকতায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখা। এই বিষয়গুলোকে যারা আলিঙ্গন করে চলেছেন তাদের অধপতন সুনিশ্চিত হয়েছে এবং আগামীতেও হবে। ইতিহাস এই শিক্ষাই আমাদেরকে দিয়ে যাচ্ছে।

তবে এই শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত জ্ঞান এবং তাঁর কাছ থেকে পাওয়া শরিয়ত যাকে কেউ কেউ ১০ আজ্ঞা বলে থাকেন অথবা ১০ কমান্ডমেন্টও বলে বেড়ান। যা হযরত মূছার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা মানবকুলের জন্য পাঠিয়েছিলেন। এই শরীয়ত আসার পূর্বে সত্য এবং মিথ্যাকে আলাদা করার কোন মানদন্ড ছিল না। তাই অন্যায়ের রাজত্বে অধপতনের আত্মঅহমিকায় নিমগ্ন ও নিমজ্জ্বিত জাতিকে উদ্ধারের জন্য ঐ শরিয়ত দিয়ে একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ জীবনের বিধান জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। যা গ্রহন ও বর্জন করার শতভাগ স্বাধীনতা এই সৃষ্টিকুলের ছিল। ঐ স্বাধীনতা এখন বর্তমান রয়েছেন এবং কিয়ামত পূর্বপর্যন্ত থাকবে।

আমাদের জীবনে, সমাজে, রাষ্ট্রে, পশু সমাজে, মৎস সমাজে, পাখি সমাজে এমনকি সৃষ্টির সকল কিছুতেই এই শৃঙ্খলা বর্তমানে প্রতিষ্ঠীত রয়েছে। তবে এই সকল প্রতিষ্ঠীত ব্যবস্থার বাস্তবায়নে মানবকুলকে দিয়েছে সর্বময় ক্ষমতা। যে ক্ষমতায় অন্তনিহীত রয়েছে ক্ষমা এবং ভালবাসা। এই ক্ষমা এবং ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়েই দুনিয়াকে শাসনের অধিনে আনয়নের জন্য সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের প্রধান্যে রেখেছেন। দুনিয়ার মধ্যে বিরাজমান সকল পশু-পাখি, সমুদ্রের মাছ এমনকি বুকে হাটা প্রাণীদের সঙ্গে গাছ-পালা বাতাস, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে নিজেদের শাসনের অধিনে বা নিয়ন্ত্রণে আনয়নের সকল সুযোগ ও ক্ষমতা দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তার ছিফতে সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাতকে। তবে এই ক্ষমতায় শাস্তি নয় বরং শান্তি আনয়নের লক্ষ্যে আর্শিবাদপূর্ণ রয়েছে। শাস্তির বিধান এবং অশান্তির বিধানালোকে বিরাজমান নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য যুগে যুগে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র এবং রাজা বাদশাহদের অধপতন সুনিশ্চিত হয়েছিল এবং আগামীতেও হবে।

আসুন আমরা আমাদেরকে অধপতনের মানদন্ডের আলোকে মাপি এবং আগামির অধপতনের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করি। তবে কারো অধপতনে আনন্দিত না হওয়ার বিধান রয়েছে। কারন আমি জানিনা আমার অধপতন কখন হবে। বরং কারো অধপতনে দু:খিত হওয়া এবং ক্ষমা ও ভালবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে পাশে থাকার পরামর্থ বা আদেশ হলো সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের অন্যতম আকাঙ্খা। আমরা এখন নিজেদেরকে অধপতনের আয়নায় দেখতে ও পরখ করতে যাওয়ার সময়। নিজেদেরকে আবিস্কারের সময় এবং নিজেদেরকে অধপতন থেকে রক্ষার সময়। তাই এই উপযুক্ত সময়কে উপযুক্তভাবে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে ব্যবহার করি এবং বিশ্বে, নিজের দেশে, সমাজে, গোত্রে, রাষ্ট্রিয় কাঠামোয় এবং পারিবারিক বন্ধনে আর নিজ নিজ জীবনে শান্তি, নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা ও স্থিতিশীলতা আনয়নে নিমগ্ন থাকি। আসন্ন বন্যার অধপতন থেকে সকলকে রক্ষায় সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দিয়ে স্ব স্ব কর্ম সম্পাদন করি। কারো দোষ না খুজে এমনকি বন্যার অধপতন হওয়ার অন্তনিহিত তাৎপর্যকে গুরুত্বারূপ করি। ঐ সকল নৈরাজ্য থেকে বের হয়ে আসি এবং ক্ষমা ও ভালবাসার নি:শর্ত বন্ধনের বিনিসুতোর মালার গাথুনিতে যুক্ত থাকি। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পরিক্ষা করেন তবে যতটুকু ধৈয্য ধারনে সক্ষম ঠিক ততটুকুই করেন এবং ধৈয্যের অতিরিক্ত পরিক্ষাও দেননা। আসন্ন সকল অধপতনে নিজেদেরকে যাচাই ও পরখ করে অধপতন মুক্ত থাকি এবং মুক্তি রাখি। এই প্রত্যাশায় আমার দৈনন্দিন মোনাজাত অবিরত।

Leave a Reply

Your email address will not be published.