কসবায় আমন চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ: ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবায় এবারের বন্যায় কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমন চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। বন্যায় রোপণকৃত আমন ধানের চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা বিভিন্ন জায়গা থেকে দ্বিগুণ দামে চারা কিনে আবার রোপন করছেন। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার অনেক কৃষক টাকার অভাবে চারা রোপন করতে পারছেন না। ফলে ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

কসবায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান সম্প্রতি বন্যায় পাকা আমন দান ও আমন ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে। একর প্রতি ১০ হাজার ৫০০ টাকা খরচ করে আমন ধানের চারা রোপণ করেন তারা। বন্যায় ধানের চারা পচে নষ্ট হওয়ায় নতুন করে বিভিন্ন জায়গা থেকে দ্বিগুণ দামে আমন ধানের চারা কিনে অনেক কৃষক রোপন করছেন। আগের এক হাজার টাকার চারা এখন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে কিনে আবার রোপণ করতে হচ্ছে। এতে নতুন করে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। দুইবার আমন ধানের চারা রোপনের কারনে একর প্রতি খরচ ২০ হাজার টাকা উপরে পড়ছে।

উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ধজনগর গ্রামের বন্যাদুর্গত কৃষক সালাম মিয়া বলেন, ৫ কানি জমির আমন ক্ষেত ৬ দিন পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত ছিল। প্রায় ৯০ শতাংশ আমনের চারা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, নতুন করে আমনের চারা সংগ্রহের চেষ্টা করছি। কিন্তু, এখনো কোথাও তা পাইনি। যদি আমনের চারা পাই তাহলে আবার ধান লাগাতে পারব। চারা না পেলে এ বছর জমি পতিত রাখতে হবে।

একই গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া জানান, তিন বিঘা জমি চাষাবাদ করে যে ফসল পান, তা দিয়ে ৫ সদস্যের সংসার চলে। কিন্তু এবারের বন্যায় পুরো জমির রোপা আমনই নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নামার পর পুনরায় জমি তৈরি করেছেন। কিন্তু কোথাও আমনের চারা পাচ্ছেন না।

বায়েক ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের কৃষক আলমগীর মিয়া জানান, রোপা আমন ক্ষেত নষ্ট হলেও বন্যায় সেই জমিতে পলি জমেছে। ফলে এখন ফসল আরও ভালো হবে। সেই আশায় ধারদেনা করে জমি প্রস্তুত করেছেন তিনি। কিন্তু আমনের চারা না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এবারের বন্যায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভায় চার হাজার ২০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাবে, ক্ষতিগ্রস্ত চার হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পুনরায় আমনের চাষ করতে ১৫০ হেক্টর জমির বীজতলা প্রয়োজন। কিন্তু বন্যায় বীজতলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুরো উপজেলাতে আমনের চারার চরম অভাব দেখা দিয়েছে।

কসবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজেরা বেগম আমার সংবাদকে বলেন, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রোপা আমন মৌসুমে ধানের চারার সংকট দেখা দিয়েছে। তবে আশা করি, এটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও রিকভারি করা যাবে। কৃষকদের মাঠপর্যায়ে এ বিষয়ে বেশকিছু পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের চলতি আমন মৌসুমে ১২ হাজার ৫০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমন ধানের চারা সংকটের কারণে চারার চাহিদা জোগান দেওয়ার জন্য কৃষকরা পরস্পরকে সহযোগিতা করে আসছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে। আশা করি, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.