ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি । । কসবায় সালিশ বৈঠক চলাকালে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এতে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় দুপক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ার কসবায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সালিশ বৈঠক চলাকালীন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ৯ জনকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুপক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের চান্দাইসার গ্রামের সফিক মিয়ার ছেলে সবুজ মিয়া (২০) এর সঙ্গে একই ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে শরীফ মিয়া (১৯) এর সঙ্গে সম্প্রতি একটি নারী সংক্রান্ত ঘটনায় সংঘর্ষ হয়। ওই বিরোধ মেটাতে এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতৃস্থানীয়রা দুই গ্রামবাসীর উদ্যোগে চান্দাইসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি সালিশ বৈঠকে বসেন।

সাবেক ইউপি সদস্য মো. মতিন মিয়ার সভাপতিত্বে এবং বিল্লাল হোসেনের সঞ্চালনায় বৈঠকে ইউপি সদস্য রাশেদুল ইসলাম রাসেলসহ এলাকার সাহেব সর্দাররা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক চলাকালীন মজলিশপুর গ্রামের মো. হোসাইন বক্তব্য দেওয়ার সময় ক্ষিদিরপুর গ্রামের এমরান সরকার বাধা দিলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে দুই গ্রামের লোকজনদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।পরে দুই গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সংঘর্ষ। খবর পেয়ে কসবা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে।

তাদের মধ্যে থেকে গুরুতর আহত হাসান মিয়া (২৫). রাইহান (২০), মো. সুজন (২৬ ), হামদু মিয়া (৭০), আনোয়ার হোসেন (৫৪), ইয়ামিন (৩৬), ফারুক হোসেন (৩৬), সুচী আক্তার (১৯), তানজিন মিয়া (২০) কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের কুমিল্লা, ব্রা‏হ্মণবাড়িয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালীন দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মজলিশপুর গ্রামের ফারুক হোসেন বাদী হয়ে চান্দাইসার গ্রামের ৯ জনের বিরুদ্ধে এবং চান্দাইসার গ্রামের সুজন মিয়া বাদী হয়ে ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ দায়ের করেন।

চান্দাইসার গ্রামের সবুজ মিয়ার বড় ভাই সুজন মিয়া বলেন, মজলিশপুর গ্রামের শরীফ মিয়া ও তার সঙ্গে আরও ১০-১৫ জন লোক নিয়ে আমার ভাই সবুজ মিয়াকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করেছে।

মজলিশপুর গ্রামের হামদু মিয়া বলেন, চান্দাইসার গ্রামের লোকজন বৈঠক চলাকালীন আমাদের গ্রামের লোকজনদের ওপর সব দোষ চাপিয়ে দেয়। এ সময় তাদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হলে তারা দাও ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়। পরে দুপক্ষে মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

বিনাউটি ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার রাশেদুল ইসলাম রাসেল বলেন, একটি নারীসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সুবজ ও শরীফ মিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই বিরোধ মেটাতে সালিশ বৈঠক চলকালীন দুপক্ষের সমর্থদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুপক্ষই তাদের গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে।

কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. জাকিয়া সুলতানা বলেন, নয়জনকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল।

কসবা থানার ওসি মো. রাজু আহমেদ বলেন, দুই গ্রামবাসীর লোকজনদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। দুপক্ষ দুটি অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগ দুটি প্রাথমিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।