প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভে রুশ হামলার পর নিজেদের যুদ্ধবিমান আকাশে উড়িয়েছে ন্যাটো দেশ পোল্যান্ড। পোলিশ ও তাদের মিত্রদের বিমানগুলো গত মঙ্গলবার রাতে মোতায়েন করা হয়। ওই সময় রাশিয়া লভিভে বড় ধরনের হামলা শুরু করে। আট দিনের মধ্যে তৃতীয়বার পোল্যান্ডের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করা হলো। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
লভিভের মেয়র আন্দ্রেই সাদোভি জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে তিন শিশু রয়েছে। টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে মেয়র সাদোভি ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেন, শহরের কেন্দ্রস্থলে স্কুল থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি ও ক্লিনিকসহ ৫০টিরও বেশি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লভিভের আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় সাতজন নিহত এবং আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। ঐতিহাসিক স্থাপত্যে ভরপুর এই শহরের কেন্দ্রস্থলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অনেক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।
পোল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনা কমান্ড এক্স প্ল্যাটফর্মে জানিয়েছে, পোলিশ ও মিত্রদের বিমানগুলো রাশিয়ার পশ্চিম ইউক্রেনে হামলার কারণে মোতায়েন করা হয়েছে। পোস্টটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এটি পুরো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য আরেকটি ব্যস্ত রাত ছিল।
গত বুধবার সকালে রাশিয়া কিয়েভসহ অন্যান্য অঞ্চলেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। গত দুই সপ্তাহে রাশিয়া ইউক্রেনে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে। রাশিয়ার সামরিক ব্লগারদের দাবি, কিয়েভের কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় এই বিমান হামলা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের একটি সামরিক ইনস্টিটিউটে রাশিয়ার দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৫০ জনেরও বেশি নিহত এবং শতাধিক আহত হন, যা এ বছরের সবচেয়ে প্রাণঘাতী একক হামলা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। তবে রাশিয়া গত মঙ্গল ও বুধবারের হামলা সম্পর্কে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে তাদের হামলার লক্ষ্য শুধু সামরিক, জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো বা বেসামরিক নাগরিক নয়।
প্রতিরক্ষা জোরদারে পোল্যান্ডের নতুন পদক্ষেপ। গত মঙ্গলবার পোল্যান্ড নতুন সামরিক চুক্তি ঘোষণা করেছে। যার মূল্য ৫২০ মিলিয়ন ডলার। রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকে পোল্যান্ড প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে পোল্যান্ড তাদের মোট জিডিপির ৪ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে, যা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। আগামী বছর এই হার ৪ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করার আশা করছে তারা।
গত মাসে, যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে ৯৬টি অ্যাপাচি আক্রমণ হেলিকপ্টার কেনার জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পোল্যান্ড। এসব হেলিকপ্টার পুরোনো রুশ এমআই-২৪ হেলিকপ্টারগুলোর পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া পোল্যান্ড শত শত আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তি ঘোষণা করেছে এবং মার্কিন প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ৪৮টি লঞ্চারের চুক্তিও করেছে।
পোল্যান্ডের সেনাবাহিনীতে বর্তমানে ২ লাখ সেনা রয়েছে। যা ন্যাটো জোটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের পর তৃতীয় বৃহত্তম এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বড়।