প্রশান্তি ডেক্স ॥ ছাত্র-জনতার স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে যা প্রয়োজন তাই করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আর পচন নয়, আমরা সুস্থ-সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই।
গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল বিজনেস ডায়লগ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, মূল লক্ষ্য যে কয়টা দিন আছি, আমরা এক সঙ্গে কাজ করবো। এই নতুন বাংলাদেশের জন্য যা প্রয়োজন তাই করবো। যেন বলে যেতে পারি, এই সময় আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছিল, আমরা সেই সুযোগ পূর্ণ ব্যবহার করেছি, আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে নতুন তরতাজা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছি।
তিনি বলেন, আমরা আর পচন নয়, আমরা সুস্থ জাতি হিসেবে, সবল জাতি হিসেবে দাঁড়াতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা যদি মন ঠিক করেন, খুব দ্রুত নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। চলেন এক সঙ্গে কাজ করি আমরা।
ড. ইউনূস বলেন, ছাত্র-জনতার লক্ষ্য ছিল একটা নতুন বাংলাদেশ হবে। তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটা নতুন সুযোগ পেলাম। এই সুযোগ না এলে আমাদের যে পচন ধরেছিল, সে পচন থেকে আমাদের মুক্তির কোনও চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না, হঠাৎ করে সমস্ত বাধা আমাদের কাছ থেকে চলে গেলো।
নতুন বাংলাদেশ গড়তে গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া শত শত ছাত্র-জনতার কথা স্মরণ করিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকে যারা সামনে বসে আছেন তারা বিশ্বমাপের উদ্যোক্তা, এই বিশ্বমাপের উদ্যোক্তারা ওই যে যুবক প্রাণ দিয়েছে তার কাছে কী শপথ নেবে?
ড. ইউনূস বলেন, যে স্বপ্নের পেছনে গিয়ে তুমি প্রাণ দিয়েছো, যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার, সে নতুন বাংলাদেশ গড়বোই। এই হবে আমাদের শপথ। এই সুযোগ জাতির জীবনে বারে বারে আসে না।
ব্যবসায়ীদের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চিন্তা করে দেখুন, কী এই সুযোগ। সমস্ত কিছু থেকে আপনি মুক্ত। অতীত আপনাকে আর টানবে না। আপনি নতুনভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন, নতুনভাবে অগ্রসর হবেন। নতুন করে যে স্বপ্ন তারা আমাদের মনে জাগিয়ে দিয়েছে সেটা যদি আপনার মনে রেখাপাত করে তাহলে সে স্বপ্ন পূরণে আপনিও শরিক হবেন। এই সুযোগ আর কখনও আসে কিনা জানি না। এই সুযোগকে আমরা যেন হারিয়ে না ফেলি। এই সুযোগ হারিয়ে ফেললে জাতির কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আজকে আমরা একযোগে এই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই- সরকার এবং সরকারের বাইরে যারা সবাই এক জোট, এক টিম। এটা একটা কমপ্যাক্ট টিম। আপনারা সেই টিমের সদস্য। যেটুকু সময় আমরা এই দায়িত্বে আছি, আমরা টিম হিসেবে কাজ করতে চাই।
তৈরি পোশাক শিল্পকে বিশ্বের এক নম্বরে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকে যে দুই নম্বরে আছি, কী করে আমরা এক নম্বর হবো, আমাদের মেয়াদকালে যদি আপনারা এক নম্বরে নিয়ে যেতে পারেন আমরাও স্মরণ করবো, যাক বাবা, একটা কিছু করেছি তো। সব কিছু আমরা জানি না, আমাদের অভিজ্ঞতা নাই। কিন্তু একযোগে কাজ করলে অভিজ্ঞতা এসে যাবে। সবার মিলে যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা কাজ করবো।
ইউরোপ-আমেরিকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আজকে ধরনা দেই ব্যবসায়ীদের কাছে যারা ইউরোপে আছে, আমেরিকাতে আছে। তাদের কাছে আমাদের ফরিয়াদ কী করতে হবে, তারাও কৌতূহল নিয়ে দেখছে আমাদের এখানে কী হচ্ছে। তাদেরকে আমরা ডেকে আনতে পারি, এখানে আসুন, তোমরাও শরিক হও এর মধ্যে। আমাদেরকে সুযোগ দাও একবার যাতে করে আমরা যে পরিস্থিতিতে আছি সেখান থেকে আরও উপরে চলে যেতে পারি।
তিনি বলেন, যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা আমাদের এখনও দাও নাই। বরং কথা হচ্ছে, আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে গেলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা হারিয়ে ফেলবো। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় শক্ত প্রতিযোগী হওয়ার জন্য আমরা সামর্থ্য অর্জন করতে চাই। আমরা পেছনে থাকতে চাই না। সেই জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছি, লুৎফে সিদ্দিকী।