যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কার মধ্যে জাতিসংঘে মিলিত হচ্ছেন বিশ্বনেতারা

প্রশান্তি ডেক্স ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৩০টিরও বেশি দেশের নেতা বৈঠকে বসবেন। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে চলমান যুদ্ধগুলোর আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যেই তারা মিলিত হচ্ছেন। গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে ধীরগতিতে হতাশা বাড়ছে। একই সঙ্গে জলবায়ু সংকট ও মানবিক বিপর্যয় আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের হামাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত এবার সাধারণ পরিষদের প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে চলেছে। তবে কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংঘাতগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানের অগ্রগতির সম্ভাবনা খুব কম।

আন্তর্জাতিক সংকট বিশেষজ্ঞ রিচার্ড গোয়ান বলেছেন, গাজা, ইউক্রেন ও সুদানের সংঘর্ষ এবার সাধারণ পরিষদে তিনটি প্রধান আলোচ্য থাকবে। তবে কোনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আশা করছি না।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শান্তিপূর্ণ সমাধানহীন অবস্থায় আটকে রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা : লেবাননে পেজার এবং ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরায়েল এই অভিযোগ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেনি।

গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেছেন, লেবাননে সংঘাতের বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ার গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। এই উত্তেজনা এড়ানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় চলমান যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় চলা আলোচনা এখনও কোনও যুদ্ধবিরতি আসেনি। গাজায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘকে ইসরায়েল-বিরোধী হিসেবে সমালোচনা করে আসছেন।

কূটনৈতিক বৈঠকের ব্যস্ততা : প্রতিবছরের মতো এবারও সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একত্রিত হওয়া বিশ্ব নেতাদের কূটনৈতিক কার্যক্রমে ব্যস্ততা থাকবে। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মূল আলোচনার পাশাপাশি শত শত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং নানা ধরনের আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের অধিবেশনের আলোচনার মধ্যমণিতে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কালে জাতিসংঘের প্রতি যে কঠোর মনোভাব দেখা গিয়েছিল, সেটির সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে।

এছাড়া দুর্ভিক্ষের প্রকোপ দেখা দেওয়া সুদান, হাইতির গ্যাং সহিংসতা এবং আফগানিস্তানে তালেবানদের দ্বারা নারীদের অধিকার হরণ—এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাদা আলোচনার আয়োজন করা হবে।

ইরান ও ইউক্রেন নিয়ে শঙ্কা : মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভূমিকা, বিশেষ করে হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতিদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগ রয়েছে। ইরানের তুলনামূলকভাবে উদারপন্থি নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন। ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দেবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকারের কথাও তারা তুলে ধরবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সাধারণ পরিষদে আবারও বক্তব্য দেবেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধান নিয়ে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন।

এদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ২৮ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবারও জাতিসংঘ অধিবেশনে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন না।

সূত্র: রয়টার্স

Leave a Reply

Your email address will not be published.