প্রশান্তি ডেক্স॥কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীতে গত কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত তিন দিনে পদ্মা নদীতে প্রায় ৩৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উপজেলায় নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলে ফসলি জমি ডুবে গেছে। ফলে নিম্নাঞ্চলের জমিতে চাষ করা মাষকলাই, মরিচ, কলাসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার মরিচা, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী এই চারটি ইউনিয়নের পদ্মার চরের অন্তত ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফসলি জমি ও সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভাঙন আতঙ্কে আছে চরবাসী। চারপাশে পানি ওঠে যাওয়ায় ইতিমধ্যে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। যা দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল। পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১২ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ধরা হয় ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।
জানা গেছে, আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও শেষের দিকে কমতে শুরু করে। তবে এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি ফের বাড়তে শুরু করে।
দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মান্নান গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বলেন, চিলমারীর প্রায় সব গ্রাম পানিবন্দি। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। যাতায়াত ব্যবস্থা চরম হুমকির মুখে। প্রত্যেক গ্রামের চারদিকেই পানি। আমার ইউনিয়নে ২১টি গ্রাম আছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আশপাশের। এ ছাড়া ১০-২০টি বাড়িতে পানি উঠে গেছে। আরও পানি বাড়লে কয়েকটি বাড়ির উঠান পানিতে তলিয়ে যাবে। চরের আবাদি জমিগুলো ডুবে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, আজ পানি বাড়েনি। তবে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের মধ্যেও ১৬টি গ্রামের চারপাশে পানি চলে এসেছে। এ ছাড়াও ৫০-৬০টি বাড়িতে পানি উঠেছে। ফসলি জমিসহ অনেক রাস্তা ডুবে গেছে।
উপজেলার মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, মরিচা ইউনিয়নের বাঁধের নিচে তিনটি গ্রামের প্রায় দুই-তিনশ বাড়ির চারদিকে পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এখনও বাড়ির মধ্যে পানি ওঠেনি।
ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নইম উদ্দীন সেন্টু বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পরে আমাদের মাঠের সব কালাই ডুবে গেছে। তবে বাড়িঘরে এখনও পানি ওঠেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মরিচা, ফিলিপনগর, চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ৬২০ হেক্টর জমির মাষকলাই পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া মরিচ ৭০ হেক্টর, কলা ৭৩ হেক্টর ও সবজি ১৩ হেক্টরের মতো পানিতে ডুবেছে। ক্ষতির পরিমাণ এখনই করা সম্ভব নয়।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এখনও কোনও বাড়িতে পানি প্রবেশ করেনি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত আছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, পদ্মার পানি আবারও বাড়ছে। আরও কয়েক দিন বাড়তে পারে, তবে বিপদসীমার নিচে রয়েছে। যেটুকু পানি বেড়েছে, তাতে চরাঞ্চল নিমজ্জিত হয়েছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে আর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই। দুই-একদিন স্থিতিশীল থেকে পানি কমতে শুরু করবে।