প্রশান্তি ডেক্স ॥ ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে খুলনা অঞ্চলে রাতভর ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ভোরের আলো ফুটতেই খুলনার পরিবেশ ও আকাশ পরিষ্কার হয়ে ওঠে। এ পর্যন্ত খুলনায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। তবে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব কেটে দুপুরে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বলেন, ‘দানার প্রভাব কেটেছে। তবে দুপুরে প্রভাবের শেষ ধাক্কা হিসেবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ভোর ৬টা পর্যন্ত খুলনায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে।’
খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। ভৈরব, রূপসা ও কাজী বাছার পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে। শহরের নিম্নাঞ্চল বাদে অন্য অঞ্চলে তেমন পানি জমে নেই। মানুষের জনজীবন এবং যান চলাচল একেবারে স্বাভাবিক। তবে দানার প্রভাব কাটলেও খুলনা উপকূলের উপজেলায় মানুষের বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগমনী সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিশিত কুমার মন্ডল বলেন, ‘আইলা আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিল। এরপর থেকে ঝড়ের কথা শুনলেই আমাদের পরান কাঁপে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুতারখালী নদী। নদীভাঙনে আমাদের গ্রামের তেলিখালী এলাকায় ওয়াপদা রাস্তা প্রায় বিলীন হতে চলেছে। যেকোনও জলোচ্ছ্বাসে একেবারে ভেঙ্গে যাবে এ রাস্তা। তাই ঝড়ের কথা শুনে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবু এখন যে উঁচু জোয়ার হচ্ছে, তাতে ভয় আমাদের কাটেনি। এলাকার একমাত্র আমন ফসল ঘরে তুলতে পারব কি না, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ‘বুধবার দুপুরের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন আশ্রয় নিতে পারেন। এসব শেল্টারে মোট তিন লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ ও ৫৬০টি গবাদিপশু রাখা যাবে।’
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘ত্রাণ তহবিলে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা, গোখাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা এবং ৭০৭ টন চাল মজুত আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আসার পর এগুলো প্রয়োজন অনুয়ায়ী ইউএনওদের মাধ্যমে বরাদ্দ করা হবে। কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা এই ৪টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র ৪৩১টি। এগুলোতে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।’