বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি সরানো উচিত হয়নি: রিজভী

প্রশান্তি ডেক্স॥ বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো উচিত হয়নি বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি তাঁর (শেখ মুজিবুর রহমান) ছবি নামিয়ে ফেলা উচিত হয়নি। খন্দকার মোশতাক নামিয়েছিলেন, জিয়াউর রহমান তুলেছিলেন।’

গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এই ক্যাম্প আয়োজন করে।

রিজভী বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক শেখ মুজিবের ছবি নামিয়ে নিলো। ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় এলেন। তিনি কিন্তু বঙ্গভবনে শেখ মুজিবের ছবি ফিরিয়ে আনেন।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল কায়েম করেছিলেন, স্বাধীনতার পরে সব দল নিষিদ্ধ করেছিলেন, গণতন্ত্র হত্যার ধারা তার হাত দিয়ে এসেছে। এর আগে ৬০-এর দশকে স্বাধিকারের আন্দোলন করেছিলেন, মানুষ তাকে বিশ্বাস করেছিল, ৭০-এ তাকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু তার অঙ্গীকার তিনি রক্ষা করতে পারেননি। যুদ্ধে তিনি কোনও ভূমিকা রাখেননি, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে স্বাধিকার আন্দোলনে তার কিছুটা ভূমিকার কথা জনগণ মনে রেখেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা তো দিয়েছেন অদম্য সাহসী মেজর জিয়াউর রহমান।’

 শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো নিয়ে ফেসবুকে মাহফুজ আলমের পোস্ট-

গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাদের একবিন্দু অবদান নাই তারা অনেকেই উপদেষ্টা, সচিব হয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘এই অন্তবর্তী সরকার কিন্তু রক্তঋণে আবদ্ধ। আজকে যারা সচিব হয়েছেন, তাদের কিন্তু কোনও অবদান নেই; যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তাদেরও কোনও অবদান নেই। অবদান তাদের, যারা জুলাই-আগস্টে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এর আগে বিএনপি যে আন্দোলনের পটভূমি রচনা করেছিল সেটা করতে গিয়ে দলটির অনেক নেতাকর্মীর জীবন চলে গেছে, অনেকে হারিয়ে গেছেন। ইলিয়াস আলী, হুমায়ূন পারভেজ, সাইফুল ইসলাম হিরু, জাকির, জনিরা- যারা রক্তাক্ত হয়েছে, ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন, অবদান তাদের।’

রিজভীর অভিযোগ, ‘বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। ড্যাবের নেতারা কথা বলতে গেলে তিনি খুব বিরক্ত হন। আন্দোলন তো দূরের কথা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কষ্টকর জীবনযাপন করেছেন কিনা আমার জানা নেই। আমি শুনে মর্মাহত হয়েছি, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য সেক্রেটারি ড্যাবের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারও করেন না। এটা দুঃখজনক ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কত ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, এখনও হাসপাতালে অনেকে কাতরাচ্ছে, আপনারা কয়জনকে দেখতে গেছেন? আমরা আপনাদেরও চিনে রাখছি। আপনারা কারা? আপনারা শেখ হাসিনার দোসর। আপনারা আজ বিভিন্ন কথা বলে বিভ্রান্ত করে সচিব হচ্ছেন, এডিশনাল সেক্রেটারি হচ্ছেন। যে চিকিৎসকরা আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যারা সমর্থন করেছেন-আজ হাসিনা টিকে থাকলে ডাক্তার রফিক, ডাক্তার কাকনদের চাকরি থাকতো না। অথচ তারা কথা বলতে গেলে আপনারা বিরক্তবোধ করেন, আপনারা দুর্ব্যবহার করেন, আপনারা এই রক্তভেজা বাংলার মাটির ওপর বসে উপদেষ্টা হয়েছেন, সচিব হয়েছেন।’

অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডাক্তার ফরহাদ হালিম ডোনার, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন প্রমুখ।

বক্তব্যের সংশোধনী:-

ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও রক্তদান কর্মসূচির অনুষ্ঠানে দেওয়া রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের একটি সংশোধনী কপি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে রিজভী বলেছেন, গত ‘মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে’ বলে একটি সংবাদের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। আমি মনে করেছিলাম বঙ্গভবনের দরবার কক্ষে যেখানে সব রাষ্ট্রপতির ছবি থাকে, সেখান থেকে শেখ মুজিবের ছবি নামানো হয়েছে। মূলত ছবিটি সরানো হয়েছিল বঙ্গভবনের অন্য একটি অফিস কক্ষ থেকে।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে শেখ মুজিবের ছবি রাখার বাধ্যতামূলক আইন করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আইনের কোনও কার্যকারিতা থাকতে পারে না। অফিস-আদালত সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয়। অনাকাঙ্খিত বক্তব্যের জন্য আমি দুঃখিত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.