আয়না ঘরের অভিজ্ঞতা এত ভয়াবহ যে এখন অনেকেই আর বলতে চায়না: নাহিদ ইসলাম

প্রশান্তি ডেক্স ॥ তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আয়নাঘরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতাসহ অসংখ্য নিপীড়নের গল্প আছে আমাদের এবং এগুলো এতটাই ভয়াবহ যে,  তারা এখনও সেগুলো আর বলতে চায় না।  যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে বারবার বলতে অনুরোধ করা হচ্ছে, কিন্তু তারপরও তারা বলতে চায় না। এতটাই ভয়াবহ ছিল তাদের সেই অভিজ্ঞতাগুলো যা শুনলে জ্ঞান হারানোর অবস্থা। 

গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে তিনি এসব বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে  ‘বিদ্রূপ ও উপহাসের রাজনীতি: জুলাই বিদ্রোহের সময় কার্টুন ও গ্রাফিতি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের গত ১৫-১৬ বছরের যে এত এত নিপীড়ন এবং মানুষের যে এত এত গল্প,  এগুলো মানুষ আর্টওয়ারের মধ্য দিয়ে জানছে। মেইনস্ট্রিম (মূলধারার) পত্রিকাগুলোতেও কিন্তু তখন কার্টুন আঁকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

নাহিদ ইসলাম নিজের আয়নাঘরে থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণণা দিয়ে বলেন, আয়নাঘর, যেখানে মানুষকে গুম করা হতো, আমারও আয়নাঘরের অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেখানে ২৪ ঘণ্টা থাকার। আমি থেকেছি সেই রুমটায় এবং দেখেছি দেয়ালে তাদের লেখা, যারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বন্দি ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, শিল্পীরা যদি তাদের এই শিল্পকর্মের মাধ্যমে এগুলো নিয়ে আসেন তাদের অভিজ্ঞতা থেকে, মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে, তাহলে বিগত রেজিমটা (আওয়ামী লীগের শাসনামল) আমরা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবো।  আমাদের আন্দোলনটাও আসলে দেয়াল লিখন এবং আর্টওয়ারের মাধ্যমে এগিয়েছে। আমরা এখন চিন্তা করছি এগুলো সংরক্ষণ করার। মানুষ আসলে কী বলতে চেয়েছিল এবং মানুষ আসলে কী বলতে চায় এগুলোর উপাদান আমরা সেখানে পাবো।

নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রায় ষোলশ’র  মতো আবেদন জমা পড়েছে গুম কমিশনে এবং সংখ্যাটা বেড়ে পাঁচ হাজার হতে পারে। মানে পাঁচ হাজার মানুষের গুমের অভিজ্ঞতা হয়েছে গত ১৫-১৬ বছরে। এই যে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো, আমরা এই কথাগুলো কেউ বলতে পারতাম না।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি আন্দোলনের দেয়াল লিখন, ভাষা,  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার কিভাবে আন্দোলনকে বিস্ফোরিত করেছে তার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ১৮ সালের কোটা আন্দোলনে সংবাদ মাধ্যম যে ভূমিকার মাধ্যমে ‘রাজাকার’ শব্দটাকে বাতিল করতে পেরেছিল, এটা বাতিলের মাধ্যমে আন্দোলনকে বাতিল করতে পেরেছিল। কিন্তু ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে তা পারেনি। এই না পারার কারণটি অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে এখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি বিরাট ভূমিকা পালন করেছে।

আলোচনা সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, আন্দোলনের সময় কয়েকদিন আগেও যারা আমাদের ছেলেদেরকে মেরেছে লাঠি দিয়ে, আওয়ামী লীগের এমন লোকের প্রমোশনের জন্যও এখন তদবির করে বিএনপির লোক, তদবির করে জামায়াতের লোক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাথমিক শিক্ষার সংস্কার যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার হবে না।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাভিন মুরশিদসহ আরও অনেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.