প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাত বন্ধে চুক্তি কার্যকর হলেও গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আশা এখনও অস্পষ্ট। গত বুধবার ভোরে লেবাননে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর আন্তর্জাতিক দৃষ্টি এখন গাজার দিকে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সেখানে দ্রুত চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার কোনও ইঙ্গিত নেই। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার লেবাননে চুক্তি ঘোষণা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় একটি চুক্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা পুনরায় শুরুর আহ্বান জানান। তবে ইসরায়েলি নেতারা স্পষ্ট করেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধের লক্ষ্য লেবাননের তুলনায় ভিন্ন।
ইসরায়েলের কৃষিমন্ত্রী ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের সাবেক প্রধান আভি ডিচটার বলেছেন, গাজা আর কখনোই ইসরায়েলের জন্য হুমকি হবে না। আমরা সেখানে একটি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করবো। লেবাননের পরিস্থিতি আলাদা। তিনি আরও বলেছেন, আমরা গাজা অভিযানের শেষ পর্যায়ে নেই। আমাদের এখনও অনেক কাজ বাকি।
গাজায় বর্তমানে ১০১ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই জিম্মিদের মুক্তি ও হামাস নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত রয়েছে।
হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি ইসরায়েলের ওপর অনমনীয়তার অভিযোগ এনে বলেন, আমরা আশা করি লেবাননের চুক্তি গাজায়ও একটি সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সৎভাবে আলোচনায় অংশ না নেওয়ার অভিযোগ এনেছে।
১৪ মাসের সংঘাতে গাজার অনেকাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং প্রায় ৪৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন গাজায় হামলা চালাচ্ছে, যার লক্ষ্য হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা।
লেবাননে যুদ্ধবিরতির খবর গাজার জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। তারা মনে করছেন, তাদের কথা ভুলে যাওয়া হয়েছে। তবে কেউ কেউ লেবাননের পর গাজা নিয়ে আলোচনার আশা করছেন।
গাজার একটি শিবিরে বসবাসকারী আয়েশা নামের এক নারী বলেন, তারা বলে, এক জায়গায় বৃষ্টি হলে অন্য জায়গায় ভালো কিছু ঘটে। আমরা আশা করি লেবাননের পর গাজার দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।
মিসর গাজা ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশটি নতুন করে আলোচনার সম্ভাবনা দেখছে। মিসরের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, লেবাননে চুক্তি টেকসই হলে ইসরায়েল গাজা নিয়ে আবার আলোচনা করতে পারে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত বুধবার থেকে তুরস্ক, কাতার ও মিসরসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে গাজা ইস্যুতে নতুন উদ্যোগ নেবেন।
তবে জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি তার শক্তিশালী সমর্থনের জন্য পরিচিত এবং পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থেকে ফিলিস্তিনিরা তার উদ্যোগের বিষয়ে সংশয়ী।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক ওফের শেলাহ বলেন, লেবানন ও গাজা সংকটকে আলাদা করা সম্ভব হলেও এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নেতিবাচক হতে পারে। কারণ এখন গাজা নিয়ে ইসরায়েলের ওপর কোনও চাপ থাকবে না।
ইসরায়েলের রাজনীতিতে নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোটের কারণে গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। জোটের অনেক সদস্য গাজা দখল করতে চান এবং লেবানন চুক্তির বিরোধিতা করেছেন।
ইসরায়েলের কৃষিমন্ত্রী আভি ডিচটার বলেছেন, গাজায় শান্তিচুক্তি সম্ভব নয়। কারণ আমরা দীর্ঘদিনের জন্য সেখানে থাকবো।