প্রশান্তি ডেক্স ॥ ১৯৭১ সালে বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস পরিকল্পিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য তারা নৃশংসভাবে অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের হত্যা করে। এই শোকের দিনটি স্মরণে প্রতি বছরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে আসছে বাঙালি জাতি। এই দিনে স্মৃতিসৌধের রক্তে রাঙা লাল বেদিতে ফুল দিয়ে জাতির সূর্যস্তানদের সম্মান জানানো হয়। যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০২২ পালনের লক্ষ্যে প্রস্তুত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ।

সারা বছর অনেকটা অবহেলায় পড়ে থাকলেও ১৪ ডিসেম্বরের আগে সাজানো-গোছানো হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি। আজ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘিরে কয়েকদিন ধরেই চলেছে যাবতীয় সাজগোজ। গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বধ্যভূমিতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ একেবারে শেষপর্যায়ে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন উপলক্ষে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে প্রবেশপথ ধুয়ে-মুছে সাফ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সংস্কার ও মেরামতের কাজও চলছে। মূল ফটকে রঙ করা হচ্ছে, স্তম্ভের বিভিন্ন স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনে ঘাস লাগানো হচ্ছে। কয়েকজন নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করছেন। দিবসটি ঘিরে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। এসময় সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় সীমিত করা হয়েছে চলাচল। স্মৃতিসৌধের ভেতরে শুধু নিয়োজিত শ্রমিক, সিটি করপোরেশনকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকতে পারছেন। এছাড়াও ওয়াসা থেকে পানি ও বিদুৎ অফিস থেকে অতিরিক্ত জেনারেটরের মাধ্যমে বিদুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
এদিন রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী বধ্যভূমিতে ঘুরতে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজন সিয়াম হোসেন। তিনি বলেন, গত বন্ধের দিন, তাই আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে এখানে ঘুরতে এসেছি। যদিও ভিতরে ঢুকতে পারিনি, কিন্তু আজকে দূর থেকে একটা ব্যতিক্রম দৃশ্য চোখে পড়লো। সেটা হচ্ছে, আমরা কিন্তু কখনও এই জায়গাটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দেখিনি। কিন্তু আজ একেবারে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। এই শিক্ষার্থী আরওে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে আজকে ঐতিহাসিক এই জায়গাটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে একেবারে পরিপাটি করা হচ্ছে। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, সারা বছর ধরে যদি এ জায়গাটি এমন পরিপাটি করে রাখা হয় না, অবহেলা-অযত্নে পড়ে থাকে
গত দুদিন ধরে রায়েরবাজারের এই বধ্যভূমিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে আমরা গত দুই দিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন আর কিছু বাকি নেই। আপাতত কঠোর নিরাপত্তার বেস্টনিতে আছে এই এলাকা। কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর কাজ শেষে আমাদেরও বের করে দিবে।