গোলান মালভূমিতে বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল

প্রশান্তি আন্তর্জাাতিক ডেক্স ॥ অধিকৃত গোলান মালভূমিতে বসতি সম্প্রসারণ উৎসাহিত করতে একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরায়েল। সিরিয়ায় আসাদ সরকার পতনে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে বলে গত রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

গোলান মালভূমির জনসংখ্যা দ্বিগুণ করতে চান বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল এই অঞ্চল দখল করেছিল।

গোলান মালভূমিতে বর্তমানে ৩০টির বেশি ইসরায়েলি বসতি রয়েছে। সবমিলিয়ে বসতিগুলোতে আনুমানিক ২০ হাজার মানুষ বাস করছেন। এছাড়া, ওই এলাকায় ড্রুজ আরব গোষ্ঠীর প্রায় ২০ হাজার সিরীয় রয়েছেন। ইসরায়েলের দখলে আসার পরও তারা এলাকা ছেড়ে যাননি।

আসাদ সরকার পতনের পর গোলান মালভূমি ও সিরিয়ার মধ্যে একটি বাফার জোনে অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা বলেছে, দামেস্কে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কারণে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ব্যবস্থা কার্যত ভেঙ্গে পড়েছে।

বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনার ঘোষণা করেও নেতানিয়াহু গত রবিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ার সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না ইসরায়েল। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে তাদের সিরিয়া নীতি নির্ধারিত হবে।

ইসরায়েলি বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি হলেও তার তোয়াক্কা করে না তেল আবিব। এ বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, গোলান মালভূমির এই এলাকা আমরা ছাড়ব না। এখানে আমরা উন্নয়ন করব এবং আরও বসতি স্থাপন করব।

তবে, নেতানিয়াহুর পরিকল্পনায় আপত্তি জানিয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বলেছেন, গোলান মালভূমিতে সম্প্রসারণের কোনও প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না তিনি।

তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সিরিয়ার সঙ্গে সংঘাত বাড়াতে ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান না বলে দাবি করেছেন নেতানিয়াহু। তাহলে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করে আবার ঠিক উল্টো কাজটিই বা কেন করছি! আমরা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট সংকট মোকাবিলা করছি।

নেতানিয়াহুর এই ঘোষণার কিছুদিন আগেই সিরিয়ার কার্যত নতুন নেতা (ডি ফ্যাক্টো লিডার) আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি সামরিক অবকাঠামোতে ধারাবাহিক ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করেছিলেন।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, ৮ ডিসেম্বর থেকে সিরিয়ায় ৪৫০টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই অন্তত ৭৫টি হামলা হয়েছে।

সিরিয়া টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আল-জোলানি বলেছেন, ইসরায়েলি হামলা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী কোনও রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না সিরিয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নতুন সংঘাতে জড়ানোর অবস্থা নেই। তার বক্তব্যের বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সিরিয়ায় চলমান হামলার বিষয়ে তাদের দাবি, চরমপন্থীদের হাতে অস্ত্র পৌঁছানো ঠেকাতে এই পদক্ষেপ প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.