বিসিএসে নিয়োগ: পুরোনা ধারায় ২২৭ জন বাদ

প্রশান্তি ডেক্স ॥ আওয়ামী মতাদর্শী না হওয়ার কারণে ২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত পিএসসির সুপারিশ করা অনেক প্রার্থী নিয়োগবঞ্চিত হয়েছিলেন। এই বঞ্চিতদের মধ্য থেকে ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের সময়ে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত সোমবার ৪৩তম বিসিএস থেকে ১ হাজার ৮৯৬ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই নিয়োগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ পাওয়া ২৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, এর মধ্যে ২২৭ জন প্রার্থীর বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার বিরূপ মন্তব্য রয়েছে। এ কারণে তাঁদের সাময়িকভাবে নিয়োগের অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়েছে। বাকি ৪০ জন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নেননি।

জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ নিয়ম হলো, কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ, দাগি অপরাধী বা এুজাতীয় কোনো অপরাধ থাকলে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করার কথা। কিন্তু বাস্তবে বছরের পর বছর ধরে প্রার্থী বা তাঁদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খোঁজা হয়। চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালে ছাত্রুজনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষ তৈরি হয়েছিল, তাতে এ ধরনের ব্যবস্থা বন্ধ হবে বলে অনেকের আশা ছিল। কিন্তু বাস্তবে এখনো তা বন্ধ হয়নি। এবার ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ২২৭ জনকে বাদ দিয়ে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর নানা আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও অনেকে নানা মন্তব্য করছেন। বাদ পড়া প্রার্থীরা এ নিয়ে সরব হয়েছেন। বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত ২২৭ জনের মধ্যে যে কেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত। কী কারণে এসব প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য পিএসসি সাময়িকভাবে ২ হাজার ১৬৩ জনকে মনোনীত করে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি সুপারিশ করে। এরপর বিধি অনুযায়ী পুলিশের বিশেষ শাখা এবং জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রার্থীর প্রাক্‌ুচরিত্র যাচাই-বাছাই করে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং এজেন্সির প্রতিবেদন বিবেচনায় ৫৯ জন মিলিয়ে মোট ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে বাকি ২ হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে গত ১৫ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই নিয়োগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বচ্ছ প্রার্থী নির্ধারণ এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশপ্রাপ্ত ২ হাজার ১৬৩ জনের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে প্রাক্‌-চরিত্র পুনরায় অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এনএসআই ও ডিজিএফআই থেকে ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীর উপযুক্ততা বা অনুপযুক্ততা বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২২৭ জন প্রার্থীর প্রাক্‌ুচরিত্র বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া যায়। ২২৭ জন প্রার্থীর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে সাময়িকভাবে নিয়োগের অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয় এবং তাঁদের বিষয়ে অধিকতর যাচাই ও খোঁজ খবর নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জনকে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়। এ অবস্থায় গত ৩০ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮৯৬ জনের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। চাকরি বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে, জেল খাটলে বা দাগি সন্ত্রাসী হলে পুলিশ রেকর্ড উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেবে। প্রতারণা করে চাকরি নিলে সেটাও এই বিবেচনায় নিতে হবে। কিন্তু এুজাতীয় অপরাধ ছাড়া অন্য কোনো বিবেচনায় বা রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে বাদ দেওয়া যায় না। কিন্তু এটি অতীতেও হয়েছে, বর্তমানেও হয়েছে। এটা কোনোভাবেই উচিত না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published.