প্রশান্তি ডেক্স ॥ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা সারা দেশে এখনও প্রায় ১৮-১৯টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সবশেষ তত্ত্বাবধায়ক ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাদী বা সাক্ষীদের অনুপস্থিতি, এমনকি কোনও ধরনের তথ্য-প্রমাণ না থাকায় আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলোর নিষ্পত্তিতে জোর দিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রায় ১৮-১৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সাজার মামলা রয়েছে। এই তিনটির মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও মানি লন্ডারিংয়ের দুটি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আরেকটি সম্পদের হিসাব বিবরণী মামলা রয়েছে।’
কায়সার কামাল বলেন, ‘এছাড়াও সারা দেশে ১৪ থেকে ১৫টি মামলা আছে, যেগুলো মানহানির মামলা। অন্যান্য মামলার মতো এই মানহানি মামলাও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। এর বাইরে যেসব মামলা ছিল সেগুলোতে তিনি খালাস পেয়েছেন। মামলার উল্লেখযোগ্য দিক হলো মামলাগুলো ২০১৪-১৫ সালে দায়ের করা হয়েছে। এরপর থেকে যারা বাদী তারা এসব মামলার কোনও খোঁজখবর নেননি। আইনে নিয়ম রয়েছে—মামলা হওয়ার পরে সাক্ষী আনতে হয়, তথ্য-প্রমাণ দাখিল করতে হয়। এগুলো কোনও কিছু করা হয়নি। যে কারণে আদালত যখন দেখছেন, মামলার বাদী নেই বা মামলার বাদী মারা গেছেন, কোনও তথ্য-প্রমাণ নেই, তখন আদালত মামলাগুলো খারিজ করে দিচ্ছেন। মূলত ২০১৪-১৫ সালে মানহানি মামলাগুলো হয়েছে। সেগুলো আদালত নিষ্পত্তি করবে। আর যে তিনটি মামলা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আছে সেগুলোও আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।’
মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে কোনও ধরনের নির্দেশনা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, তারেক রহমানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে প্রচলিত আইন-আদালত মেনে আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার।
মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে কতদিন সময় দরকার হতে পারে, এ প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমানের অন্যতম এই আইনজীবী বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। সুতরাং, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে যত সময় প্রয়োজন, সে সময় টুকুই প্রয়োজন হবে। আনুমানিক সময়টা বলা সম্ভব না। কারণ, আইনি প্রক্রিয়াটি অনুমাননিভর্র নয়। আমরা চাচ্ছি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে। এই নিষ্পত্তি মূলত আদালতের ওপর নির্ভর করছে যে কতটুকু সময় লাগবে বা লাগবে না। আমার বিশ্বাস করি, এসব মামলার কোনও আইনগত ভিত্তি নেই। তিনি (তারেক রহমান) ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তিনি (তারেক রহমান) শেখ হাসিনা ওয়াজেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাকে এসব মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা চেয়ে ছিলেন তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। কিন্তু দেশের গণতন্ত্রকামী-মুক্তিকামী মানুষ ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সফল আন্দোলনের মাধ্যমে সেই শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। দেশে এখন আইনি প্রক্রিয়া ও আইনি শাসন কায়েম হচ্ছে। আমার প্রত্যাশা, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারেক রহমান আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাবেন।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘তারেক রহমান এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভবিষ্যৎ, তা ফ্যাসিস্ট সরকার অনেক আগেই চিন্তা করেছিল। এজন্য নির্যাতন করে তার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব মামলা করা হয়েছিল এবং সেসব মামলার কোনও ভিত্তি ছিল না।’
মামলাগুলো চলমান থাকাবস্থায় তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনও আইনি বাধা আছে কিনা, জানতে চাইলে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘দেশে ফেরা নিয়ে কখনও কোনও বাধা ছিল না। কিন্তু ফ্যাসিস্ট রেজিম পলাতক শেখ হাসিনা কীভাবে বক্তব্য রেখেছেন (বিগত সময়ে)। তুই-তোকারি করে কথা বলেছেন—‘সাহস থাকলে তুই দেশে আয়।’ এখন বাংলাদেশের মানুষ যদি তাকে (শেখ হাসিনাকে) এই কথাটার উত্তর দেয়, কেমন হবে জানি না। আমি আমার পজিশন থেকেও এমন বালখিল্য কথা বলতে চাই না। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে বা তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে ধরনের আস্ফালন করেছিলেন এবং বালখিল্য আচরণ করেছিলেন, জাতি এতে বিব্রত এবং নাগরিক হিসেবে আমিও বিব্রত। সুতরাং, তারেক রহমান দেশে আসার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে—তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইনের শাসনে বিশ্বাসী এবং যখনই তিনি আসেন না কেন, তিনি আইনিভাবেই মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে চান। তাই আর কোনও আইনি বাধা নেই।’’