প্রশান্তি ডেক্স॥ অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘সিন্ডিকেট বদলে এক হাত থেকে আরেক হাতে গেছে, এটা বলার জন্য আপনি সরকার হন নাই; বরং এই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য আপনাকে বসানো হয়েছে।…আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর হস্তে এই সিন্ডিকেট ও বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন।গত সোমবার বিকেলে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন। ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে জন আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে’ এ সমাবেশের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘৮ আগস্ট সরকার গঠন করার পর গত জানুয়ারির ৬ তারিখ। এখন পর্যন্ত কিন্তু দৃশ্যমান একটি বিচারও আমরা দেখি নাই। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি, আপনারা জানেন ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে যেভাবে কারচুপি করা হয়েছে, সেগুলোর এখন পর্যনাত কোনো বিচার করা হয়নি। এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা যদি আমাদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চান, অবশ্যই অবশ্যই অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমাদের এই বিচারগুলো আপনার নিশ্চিত করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনারা জানেন, এখন পর্যন্ত অনেকে আমাদের বিপ্লবকে মেনে নিতে পারে নাই। সে জন্য কিছুদিন পরপর আমরা দেখি বিচার বিভাগে ক্যু করা হয়, পুলিশে ক্যু করা হয়, আনসারের বিদ্রোহ হয়, সচিবালয়ে আগুন লাগানো হয়।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলতে চাই, আপনারা রিয়েলিটি মাইনা নেন। আমরা একটা দীর্ঘ সময় ধরে বিভাজনের রাজনীতির মধ্যে বেড়ে উঠেছি। বিভাজনের রাজনীতি মধ্যে রেখে আমরা জাতীয় ঐক্যে কখনো পৌঁছাতে পারিনি। আমাদের পূর্বেও যাঁরা রাজনীতিবিদ রয়েছেন, আপনাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সেগুলোকে আমরা তরুণ প্রজন্ম সম্মান জানাই। ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করার ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের যে প্রত্যয়, আপনাদের প্রজ্ঞার সঙ্গে তাঁদের প্রত্যয়ের যদি সম্মিলন ঘটাতে না পারেন, তাহলে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা ব্যর্থ হব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, ‘১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই অন্তবর্তীকালীন সরকার আপনাদের রক্তের স্বীকৃতি দিক, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই অন্তবর্তীকালীন সরকার খুনি হাসিনার বিচারের একটি স্পষ্ট বার্তা দিক, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রক্লামেশন অব জুলাই রেভল্যুশনে জনুআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক।’
ছাত্র সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমাদের এই ভাবনা ছিল বাংলাদেশের দুটি জেলা স্বাধীন হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। তার একটি ফরিদপুর। ৩, ৪, ৫ আগস্ট ফরিদপুরবাসী যে গণজোয়ার দেখিয়েছে, তাতেই শেখ হাসিনার পতনের ভিত রচিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘খুনি হাসিনা অবশ্যই চট করে বাংলাদেশে আসবেন। এসে অবশ্যই সরাসরি ওই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন। এরপর সেখান থেকে সরাসরি ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবেন।’
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের কথা বলেছি। আপনারা রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে এই অভ্যুত্থানে সফল করেছেন। এই অভ্যুত্থান সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্বীকৃতি থাকতে হবে। এই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। ২৪-এ যারা জীবন দিয়েছে, আমার শহীদ ভাইয়েরা যারা রক্ত দিয়েছে, আমাদের আহত যোদ্ধারা, তাদের স্বীকৃতি এই ঘোষণাপত্রে থাকতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেলের সম্পাদক জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম, রিফাত রশিদ, আশরেফা খাতুন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ফারহান হাসান, নাবিলা তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।