এখনও ছাপা হয়নি ১২কোটি পাঠ্যবই

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ফেব্রুয়ারিতে সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার সর্বশেষ প্রতিশ্রুতি সরকার রক্ষা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণির ৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে এখনও ১২ কোটি বই ছাপাই হয়নি। যেসব বই ছাপা হয়েছে সেগুলোও বাইন্ডিংয়ে যাচ্ছে না। এছাড়া মুদ্রণ মালিকদের কাছ থেকে কাগজ বাবদ অগ্রিম যে টাকা নেওয়া হয়েছে তার বিপরীতে তাদের কাগজ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ফেব্রুয়ারিতে সব বই পাবে না শিক্ষার্থীরা।

গত রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নবম ও দশম শ্রেণির মাত্র তিনটি বই দিতে পারলেও বাকি বইগুলো দিতে পারেনি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি কোনও কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির একটি বই দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জানানো হয়, মাধ্যমিকের কোনও শ্রেণির তিনটি, কোনও শ্রেণির দুই-একটি, আবার কোনও শ্রেণির কিছু বই পাওয়া গেছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি বই পেয়েছে। 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘সপ্তম শ্রেণির বই প্রায় শতভাগ চলে গেছে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বই ৪৯ শতাংশ গেছে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শতভাগ বই চলে গেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই ১১ ফেব্রুয়ারি মধ্যে চলে যাবো। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বইগুলোর ফর্মা সংখ্যা কম হওয়ায় ছাপাতে বেশি সময় লাগবে না। প্রিন্টাররা যদি বাইন্ডিং হাউজে বই নিয়ে যায় তাহলে সব বই আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সারা দেশে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।’

এনসিটিরি তথ্য মতে, এখনও ১২ কোটির মতো বই ছাপানো বাকি। আরও তিন কোটি বই ছাপা হলেও বাঁধাই হচ্ছে না। ফলে ১৫ কোটি বই শিক্ষার্থীদের পেতে আরও বিলম্ব হবে। তিন কোটি পাঠ্যবই ছাপার পর তা বাইন্ডিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু লোকসানের ভয়ে বই ছাপার পরও বাইন্ডিংয়ে দেওয়া হয়নি। জানা গেছে, এক হাজার ফর্মা ইন্টারলিপ করতে বাইন্ডাররা ১৮০ টাকা নিয়ে থাকে। প্রিন্টাররা তাদের ১৩০ টাকা দিতে চেয়েছিল। এনসিটিভির পক্ষ থেকে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তাতেও ৩০ টাকা করে লোকসান হবে, সে কারণে বেশ কিছু মুদ্রণ মালিক ছাপার পরও বই বাউন্ডিংয়ে পাঠাচ্ছে না।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ত্রিশ-চল্লিশ টাকা লোকসানের কারণে যেসব প্রেস বাইন্ডিং হাউজে যাওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে, বাইন্ডিংয়ে যাচ্ছে না; আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে তারা বাইন্ডিংয়ে যায়।’

যদিও মুদ্রণ মালিকরা বলছেন ফেব্রুয়ারিতে সব বই দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ হিসেবে তারা বলেন, পাঠ্যবই সরবরাহের সময় রয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই পাঠ্যবই দেওয়া হবে। এ মাসের মধ্যে সব বই দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

মুদ্রণ শিল্প মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, ‘এনসিটিবির মধ্যস্থতায় প্রেস মালিকরা কাগজের জন্য অগ্রিম যে টাকা দিয়েছিল এখন সেই কাগজ পাচ্ছে না মুদ্রণ মালিকরা। তাহলে বই ছাপা হবে কীভাবে? সে কারণেই ফেব্রুয়ারিতে সব বই দিতে পারবে না মুদ্রণ মালিকরা। তবে মার্চ মাসের মধ্যে সব বই দিতে পারবে।’

মুদ্রণ মালিক ও এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার করায় পাঠ্যবই সরবরাহের সময় পিছিয়ে যায়। ফলে এ বছর পাঠ্যবই সময়মতো পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই বই চায়। সরকার ও শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনা করে মুদ্রণ মালিকরা দ্রুত বই সরবরাহের চেষ্টা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.