প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ সৌদি আরবে মার্কিন-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকের আগে ভ্লাদিমির পুতিন ভালো অবস্থানে রয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন রুশ প্রেসিডেন্টের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান করেছে, ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা ঐক্য ভেঙে গেছে এবং ইউরোপকে রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্র কতদূর যেতে প্রস্তুত, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। এটি পুতিনের দিকে ঝুঁকে পড়া এবং ঐতিহ্যবাহী মার্কিন মিত্রদের কাছ থেকে সরে আসার মতো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।

ইউরোপে তাদের প্রথম পদক্ষেপে একগুচ্ছ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ট্রাম্পের সহকারীরাও এই আশঙ্কা বাড়িয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে যেকোনও চুক্তি মেনে নেবেন এমনকি যদি তা ইউক্রেন এবং একটি মহাদেশের জন্য খারাপও হয়। একই সময়ে মহাদেশটির সীমান্ত রাশিয়ার সম্প্রসারণবাদের হুমকির মুখে।
ইউক্রেনে শান্তি আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় বন্ধুদের বাদ দেবে এমন ইঙ্গিতও ইউরোপীয় রাজধানীগুলোতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, যদিও যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য কোনও চুক্তির অংশ হিসেবে নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং সেনা প্রদানের জন্য তাদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। ফ্রান্স গত সোমবার প্যারিসে একটি জরুরি বৈঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আহ্বান জানিয়েছে।
ট্রাম্প ইউক্রেনকেও আলোচনার অংশ করা হবে না এমন আশঙ্কা তৈরি করেছেন। যা একটি জাতি হিসেবে ইউক্রেনের অস্তিত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি স্বৈরাচারী প্রতিবেশী দেশ তাদের সার্বভৌম ভূখণ্ড আক্রমণ করেছে, যুদ্ধাপরাধ, বেসামরিক হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট গত রবিবার পুতিনের সঙ্গে খুব শিগগিরই বৈঠকের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি ফ্লোরিডায় সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা রাশিয়া, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করছি এবং এ জন্য খুব কঠোর পরিশ্রম করছি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’-এ সতর্ক করে বলেছেন, তিনি ইউক্রেন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সিদ্ধান্ত কখনও মেনে নেবেন না। এরপর ট্রাম্প একটি অস্পষ্ট আশ্বাস দিয়েছেন যে জেলেনস্কি আলোচনায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ সৌদি আরবের আয়োজনে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। তারা মস্কো ও ট্রাম্প দল উভয়েরই বন্ধু।
রুবিও এই বৈঠকটিকে ট্রাম্পের গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের ধারাবাহিকতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সিবিএসের ফেস দ্য নেশন-এ বলেন, আসন্ন কয়েক সপ্তাহ ও দিন নির্ধারণ করবে এটি গুরুত্বপূর্ণ কিনা। শেষ পর্যন্ত, একটি ফোনালাপ শান্তি আনে না। একটি ফোনালাপ এত জটিল যুদ্ধের সমাধান করে না।
রুবিও ট্রাম্পের ইউক্রেন দূত কিথ কেলগের বক্তব্যেরও বিরোধিতা করেছেন। কেলগ গত শনিবার বলেছিলেন, কিয়েভ শান্তি আলোচনায় জড়িত থাকলেও ইউরোপীয় দেশগুলো থাকবে না। রুবিও বলেন, যদি এটি সত্যিকার আলোচনা হয় তবে ইউক্রেনকে জড়িত করতে হবে। কারণ তাদেরই আক্রমণ করা হয়েছে এবং ইউরোপীয়দেরও জড়িত করতে হবে। কারণ তাদেরও পুতিন ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং তারা এই প্রচেষ্টায় অবদান রেখেছে।
মার্কিন প্রশাসনের মিশ্র বার্তাগুলো আশঙ্কা বাড়াচ্ছে যে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প একটি চুক্তি করতে পারেন, যা রুশ আক্রমণকে বৈধতা দেবে এবং তারপর ইউক্রেনের ওপর তা চাপিয়ে দেওয়া হবে। যদিও বেশির ভাগই মেনে নিয়েছেন যে রাশিয়ার দখলকৃত সব ভূমি ফিরে পাবে না ইউক্রেন। তবু ট্রাম্প রুশ নেতার সঙ্গে ফোনালাপ করে সুবিধা হারানোর জন্য সমালোচিত হয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও সমালোচিত হয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, একটি শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের পথ থাকবে না এবং কোনও মার্কিন শান্তিরক্ষী সেনা জড়িত থাকবে না।
কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্ডার গাবুয়েভ সিএনএনের বিয়ানা গোলোদ্রিগাকে গত রবিবার বলেছেন, এটি সত্যিই ইস্টার, হানুকা, ক্রিসমাস, ভ্লাদিমির পুতিনের জন্মদিনের মতো এবং সবকিছু একদিনে ঘটছে।