প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সোমবার ট্রাম্প প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। গাজা ও ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে মার্কিন কর্মকর্তারা সৌদি আরব সফর করছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে। মার্কো রুবিও ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এই সফরে রয়েছেন। এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসনকে গাজা ও ইউক্রেন সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ না করে একতরফা নীতি গ্রহণের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছে।

গত সোমবার সকালে রুবিও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তবে এই বৈঠকগুলোর বিষয়বস্তু সম্পর্কে তেমন কিছু জানানো হয়নি। একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে যুবরাজকে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আনন্দিত বলে জানাতে দেখা গেছে। ইসরায়েল থেকে রিয়াদে আসা রুবিও এবং তার সহকর্মীরা সৌদি নেতৃত্বের কাছে যুদ্ধপরবর্তী গাজার জন্য একটি ভিশন প্রস্তাব করার আহ্বান জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে অঞ্চলটি দখলের প্রস্তাব আরব বিশ্বে ব্যাপক বিরোধিতার সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে সৌদি আরবও রয়েছে। এর ফলে রুবিও ও অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তারা আরব নেতাদের বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানিয়েছেন, রুবিও ও যুবরাজ গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। রুবিও আঞ্চলিক নিরাপত্তায় অবদান রাখতে গাজার জন্য একটি সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। রুবিওর এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গাজার দীর্ঘমেয়াদি শাসন কেমন হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
গত সোমবার কায়রোতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানো, বিশেষ করে অস্থায়ী আবাসনের জন্য তাঁবু ও ট্রেলার পাঠানোর বিষয়ে মতবিরোধ মেটানোর চেষ্টা করা হবে। তবে যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করার আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে ইসরায়েলি সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। মার্চের শুরুতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে হামাস ও ইসরায়েলের আলোচনা পুনরায় শুরু না হলে এই বিরতি শেষ হয়ে যাবে। ইসরায়েলি নেতৃত্ব চাইছে না যে যুদ্ধবিরতি হামাসকে একটি সামরিক শক্তি হিসেবে টিকে থাকতে সাহায্য করুক। তবে হামাস গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তাদের সামরিক শাখাকে নিরস্ত্র করতে রাজি হচ্ছে না। ট্রাম্প গাজা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে মিসর ও জর্ডানে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ওই দেশগুলোর পাশাপাশি সৌদি আরবের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্থিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা জাতিগত নির্মূলনের শামিল এবং এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই প্রস্তাব ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথে আরও একটি বাধা সৃষ্টি করেছে। সৌদি নেতৃত্ব বলেছে, গাজা থেকে ফিলিস্থিনিদের বাস্তুচ্যুত করা হলে বা ফিলিস্থিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের পথ না খুলে দিলে তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সৌদি আরবকে ফিলিস্থিনি শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া এবং সৌদি ভূমিতে একটি ফিলিস্থিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেওয়ার পর এই আলোচনা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেতানিয়াহুর বক্তব্যকে একটি চরমপন্থি, দখলদার মানসিকতার প্রতিফলন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।