সদ্য বিদায় নেয়া ২১শে ফেব্রুয়ারী আমাদেরকে শিক্ষা এবং চেতনা দেয় আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিস্থাপনে। আমার ৫৩ বছরের নাতিদীর্ঘ জীবনে এই একুশকে বিদায় নিতে যেমন দেখেছি তেমনি ফিরে আসতেও দেখিছি। তবে তা বছরে একবারই আসে এবং যায়। কিন্তু এর রেশ বা তাৎপর্য অথবা শিক্ষা এমনকি চেতনা আমাদেরকে তাড়না দিতে দেখা যায়নি। শৈশবে দেখেছি, এই দিবসকে কেন্দ্র করে শালিন ও অতিগ্রহণযোগ্য আনুষ্ঠানিকতা এবং বিভিন্নভাবে বরণ ও স্মরণ করার পালা। যেমন প্রভাত ফেরী, গান, নাটক, কবিতা আবৃত্তি এমনকি আলোচনা সভা কোথাও কোথাও দোয়া মাহফিলও দেখেছি। কিন্তু দিন দিন এর কদর কমতে শুরু করেছে। পুর্বের ন্যায় সেই চেতানায় আর নতুনত্ব কিছু পাওয়া যায়নি। বরং ভুলে যাওয়ারই নামান্তরে পরিণত হয়েছে।
তবে একুশে একটি রাষ্ট্রিয় অনুষ্ঠান বা ছুটিতে পর্যায়ক্রমিকভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। যা আগে ছিল বাঙ্গালীর হৃদয়ের স্পন্দন এবং আলিঙ্গনে উদ্ভুদ্ধ হয়ে বিস্ফোরিত একটি স্বতস্ফুর্ত উজ্জ্বীবিত প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এই হারিয়ে যাওয়ার পিছনে কি কি কারণ তা খুজে বের করা অতিব জরুরী। নতুবা আমাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের মননে এবং জ্ঞানে আর আগামীর সম্ভাবনায় বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে গিয়ে ঠেকবে। তবে এখন ২১কে অপমানও করা হয় বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন অজুহাতে। তাই একুশের তাৎপর্য এবং উপযোগীতা ও গ্রহনযোগ্য অবস্থান পুনুরুদ্ধার করুন এবং নিয়ম-শৃঙ্খলায় এবং শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় আর কৃতজ্ঞতায় আলিঙ্গনে আবদ্ধকরণে অবদান রাখুন।
২১’শের বিদায়লগ্নে এসে উকি দিল আস্থা ও অবিশ্বাসের উর্বরতম অস্থিরতা। এই অস্থিরতা স্থবিরতা বা বিশ্বাস এবং আস্থা পুনরুদ্ধার অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে। বিভিন্নভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, এই আস্থা ও বিশ্বাস ভঙ্গের পিছনে ক্ষমতার মোহ। তাই ক্ষমতাকে আস্থা ও বিশ্বাসের বাইরে রাখা জরুরী। ক্ষমতাকেন্দ্রীক আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন দীর্ঘস্থায়ী সফলতা বয়ে আনতে পারে না। বরং ঐক্য বিনষ্ট করে। সফলতায় একটি বিরাট দেয়াল তৈরী হয়। যে আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ৫ই আগষ্ট সৃষ্টি হয়েছিল সেই আস্থা ও বিশ্বাসে চীর ধরেছে। দৃশ্যমান হয়েছে বিভাজনের বিষবাস্পের নেতিবাচক প্রভাব ও বিরুপ প্রতিক্রিয়ার। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের বিকল্প নেই। কারণ জাতি আর কোন রক্তক্ষরণ বা ৫ আগষ্টের পুনরাবৃত্ত্বি দেখতে চায় না বরং ঐব্যবদ্ধ পথচলার আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দিপনা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করতে চায়।
কথায়, আচরনে, চলনে ও বলনে বিভক্তির যে চিহ্ন প্রদর্শিত হয়েছে তা বিতারিতকরণে মননিবেশ করুন। যদি ক্ষমতাই এর একমাত্র কারণ হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমতা থেকে বিতারিতদের দশাদেখে শিক্ষা নিন। নতুবা এই জাতি দুর্ভাগা জাতি হিসেবেই স্বীকৃত্ত্বির সর্বোচ্চ শিখড়ে আরোহন করবে। জনগণ চায় পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন আর নতুনত্ব। কিন্তু পুরাতনকে আগলে ধরে পুরাতনালয়ে নতুন ক্ষমতার পালাবদল বা আবির্ভাব জনগনকাম্য নয়। আর এইজন্য জনগণের পুর্নসমর্থন ৫আগর্ষ্ট কেন্দ্রিক হয়নি। এখনও সময় আছে জনগনের আকাঙ্খা ও অভিপ্রায় বুজে কাজ করুন। নিজেদেরকে নিয়োজিত করুন জনপ্রত্যাশা পুরণের তরে। ৫আগষ্ট পরবর্তীতে যা জাতি প্রত্যক্ষ করেছে তা কিন্তু কাম্য নয় এবং ছিলও না। তবে অপ্রাত্যাশিতভাবেই সেই পরাজিত সরকারের সকল কিছুই চলমান এবং ও বহমান রয়েছে শুধু খুলশ পাল্টিয়েছে বা বদলিয়েছে মাত্র। এইভাবে আর চলেনা এমনকি চলতেও দেয়া যায়না। সুতরাং সাধু সাবধান। জনগণ কিন্তু যে কোন সময়ই নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট এবং আত্মত্যাগে প্রস্তুত। তাই সবাইকে সবিনয় অনুরোধ করব আসুন আমরা ৫আগষ্ট পুর্ববর্তী ঐক্যবদ্ধতায় ফিরে যায় এবং জনআকাঙ্খায় মনোনিবেশ করি।
রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাবজনে ক্ষত-বিক্ষত বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধকরণে এগিয়ে আসুন। পাশাপাশি ধর্মীয় আদর্শ এবং মুল্যবোধের চর্চায় স্ব স্ব ধর্মের আলোকে এগিয়ে আসুন। সবাই আমরা আশরাফূল মাখলুকাত। এই সৃষ্টির সেরাজীবে যেন ধর্ম, রাজনীতি, ধনী গরীব, ক্ষমতা এবং অর্থ বিত্ত আর ভিন্ন মত ও পথের কারণে যেন কোন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেইদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাঁর অভিপ্রায় বুঝা এখন ফরজে আইনে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা সকল ধর্মের মানুষকেই সৃষ্টি করেছেন তাঁর মত করে, সবাইকেই প্রয়োজনীয় যোগান দিয়ে যাচ্ছেন, সবাইকেই ভালবাসেন, ক্ষমা করেন, পরিচর্যা ও দেখাশুনা করেন। সবাই তাঁরই অধিনে এবং তাঁরই নিয়ন্ত্রণে আর তাঁরই বিচারালয়ের সামনে। তাই সকলকিছু বিবেচনায় নিয়ে পথ চলুন। সৃষ্টির সেরাজীব হিসেবে নিজেদেরকে আরো উঁচুতে অধিষ্ঠীত করুন।
২১’র বিদায়ে এই আহবানই আমার সকলের প্রতি। সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। আর যে আকাঙ্খা আমার বা আমি যা আশা করি তা যেন আগে নিজে করে দেখায়। ২১’র চেতনা ধারণ ও লালন করি। সকলকেই সম্মান ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। ক্ষমা এবং ভালবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে চর্চায় আনয়ন করি। সৃষ্টিকর্তার সেই কথায় ফিরে যায় “ যদি তোমার এক গালে কেউ চর মারে তাহলে আরেক গাল পেতে দিও। প্রয়োজনীয় যোগানে ভরপুরতা এবং নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা বিধানে আস্থা ও বিশ্বাস এবং ক্ষমা ও ভালবাসা দিয়ে আর নিশর্ত এবং নিস্বার্থ হয়ে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করুন। রিওয়ার্ড (উপহার) হিসেবে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাওয়ার আশায় অধির আগ্রহে নিরুপীত সময়ের অপেক্ষায় থাকুন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে তাঁরই অভিপ্রায়ে পরিচালিত করুন এবং পৃথিবী থেকেই বেহেস্তি শান্তি উপভোগ করিয়ে আপনার কাছে ফিরিয়ে নিন। আমীন ॥