প্রশান্তি ডেক্স ॥ ‘গণতান্ত্রিক সরকার’ গঠনে অন্তর্বর্তী সরকার ‘নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে’ এমন জনপ্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

গত বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে এক ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে এই ইফতার আয়োজন করে বিএনপি। এতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, একটি রাষ্ট্রে একটি সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নীতি কিংবা রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি। সুতরাং, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী এবং টেকসই কার্যকর রাখতে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ক্ষমতাহীন জনগণ এবার নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে প্রস্তুত।’
‘জননিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জনদুর্ভোগ কমানোর সব পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনগণের ভোট জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে এটাই গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রত্যাশা।’
তারেক বলেন, ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বৈষম্যহীন নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নির্বাচিত জাতীয় সরকারের মাধ্যমেই বিএনপি রাষ্ট্র ও রাজনীতি মেরামতের কাজগুলো সফল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্য পূরণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার করবে। যা অতীতেও আমরা জাতির সামনে কমিটমেন্ট করেছি।’
‘গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলো সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের প্রতি আহ্বান, গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান—বীর জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে গড়ে ওঠা ঐক্যবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে এখনও। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি, স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনও ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না, ইনশাআল্লাহ।’
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে সব শহীদ ও আহতদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
‘সরকারকে সর্তক থাকতে হবে’ : তারেক রহমান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, তাদের নিরাপত্তাহীন রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। সরকার, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি, কিংবা অন্য কোনও কাজে বেশি মনোযোগী থাকার কারণে আমাদের মা-বোন-কন্যারা নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে কিনা, এ বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।’
‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে। অপর দিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চরিত্র সমুন্নত রাখতে চরম পন্থা ও ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতার অপশক্তিকে প্রতিহত করার পাশাপাশি গণহত্যাকারী পলাতক মাফিয়া চক্রকে যেকোনও মূল্যে বিচারের সম্মুখীন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা শক্তিশালী করাই হবে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক পক্ষের শক্তির আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’
রাজনীতিকরা যা বলেছেন : এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, ‘আমাদের একটা জিনিস অনুধাবন করতে হবে যে দেশটা আমাদের। ভারতের দালালি করে কোনও লাভ হবে না। আমরা বহুদিন দালালি করেছি, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
‘এবার ভারতের পেঁয়াজও নাই, এবার ভারতের চালও নাই, কিন্তু বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। সুতরাং, আমাদের আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হতে হবে, হুজুরে পাকের (সা.) ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যদি আমরা আগাই— আমরা আর কখনও স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবো না।’
তারেক রহমানসহ তরুণ নেতৃত্ব যদি অভিজ্ঞতা নিয়ে এগোতে পারে, তাহলে দেশকে আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে না বলে মন্তব্য করেন অলি।
‘৪ দফায় ঐক্য চাই’ : জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য এখন জাতীয় ঐক্যই হবে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই লক্ষ্য রেখেই যার যার জায়গা থেকে আমাদের চারটি বিষয়ে এক থাকতে হবে। এক. বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব, এতে কোনও আপস নাই। দুই. একটি টেকসই গণতন্ত্র, তিন. একটি ফেয়ার ইলেকশন এবং চার দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। এভাবে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থেকে সমাজ তৈরি করতে পারি, ইনশাআল্লাহ কোনও ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, পতিত স্বৈরাচার, পতিত লুটেরা এ দেশে আর কখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না, সাহস পাবে না।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বক্তব্য দেন : প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বক্তব্য রাখেন।
অংশগ্রহণ করলেন যারা : গত বুধবার (১৯ মার্চ) বিকালে রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিএনপির ইফতার মাহফিলে রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের মিলনমেলায় বিএনপির বাইরে অন্যান্য দলের মধ্যে যারা এসেছেন, তারা হলেন এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম, মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক, বিজেপির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণঅধিকার পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় দলের আহ্বায়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার সভাপতি রাশেদ প্রধান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম, ইসলামী আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক গাজী আতাউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহদাৎ হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আব্দুল কাদের, হেফাজত নেতা মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী, জুনায়েদ আল হাবিব প্রমুখ। বিএনপির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, খায়রুল কবির খোকন, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বেবী নাজনীন প্রমুখ।