প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৫০৬ জন নিহত ও ৯০৯ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ২০০ শিশু রয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২০০ শিশুসহ ৫০৬ জন নিহত হয়েছেন। এই হামলায় ৯০৯ জন নাগরিক আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি বাহিনী গত বৃহস্পতিবার তাদের স্থল অভিযান সম্প্রসারিত করেছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযান পুনরায় শুরু করার পর বৃহস্পতিবার গাজা জুড়ে অন্তত ৯১ জন ফিলিস্থিনি নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
দুই মাসের আপেক্ষিক শান্তির পর গাজাবাসী আবারও প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছেন। কারণ ইসরায়েল কার্যত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নতুন করে ব্যাপক বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করেছে। ইসরায়েলি বিমান আবাসিক এলাকাগুলোতে লিফলেট ফেলেছে, যাতে উত্তরের বেইত লাহিয়া ও বেইত হানুন শহর, গাজা সিটির শিজাইয়া জেলা এবং দক্ষিণে খান ইউনিসের পূর্ব প্রন্তের শহরগুলোর বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২৯ বছর বয়সী সামেদ সামি বলেছেন, যুদ্ধ ফিরে এসেছে, বাস্তুচ্যুতি ও মৃত্যু ফিরে এসেছে। আমরা কি এই পর্বটি টিকতে পারব?’
গাজার মধ্যাঞ্চলে ট্যাংক পাঠানোর এক দিন পর গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, তারা উত্তরের উপকূলীয় রুট বেইত লাহিয়াতেও স্থল অভিযান শুরু করেছে।
ফিলিস্থিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলি হামলা পুনরায় শুরু করার প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় পাল্টা জবাব দেয়নি। তারা বলেছে যে তাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা থেকে প্রজেক্টাইল নিক্ষেপের পর দেশের কেন্দ্রে সাইরেন বেজে উঠেছে।
ফিলিস্থিনি মেডিক্যাল কর্মীরা বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি বাড়ি লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করতে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর মঙ্গলবার সেনাবাহিনী গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ অভিযান শুরু করে এবং পরের দিন সেনা পাঠায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে, গত ২৪ ঘণ্টা ধরে তাদের বাহিনী গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশকে পৃথককারী একটি বাফার জোন সম্প্রসারণের অভিযানে জড়িত ছিল। যাকে নেটজারিম করিডোর বলা হয়। ইসরায়েল সালাহউদ্দিন সড়ক, প্রধান উত্তর-দক্ষিণ রুট থেকে দূরে থাকার জন্য বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছে এবং বলেছে যে তাদের পরিবর্তে উপকূল বরাবর যাত্রা করা উচিত।
গত মঙ্গলবার বিমান হামলা পুনরায় শুরু করার প্রথম দিনে ৪০০ এর বেশি ফিলিস্থিনি নিহত হয়েছেন, যা যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ দিনগুলির মধ্যে একটি।
হামাস বলেছে, ইসরায়েলি স্থল অভিযান এবং নেটজারিম করিডোরে অনুপ্রবেশ দুই মাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তির একটি ‘নতুন ও বিপজ্জনক’ লঙ্ঘন। একটি বিবৃতিতে তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং মধ্যস্থতাকারীদের তাদের দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছে।
এই মাসের শুরুতে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের সাময়িক সমাপ্তি ঘটে। হামাস দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে চায়। তাদের দাবি, এর অধীনে ইসরায়েলকে যুদ্ধ শেষ এবং সেনা প্রত্যাহার করার জন্য আলোচনা করতে হবে এবং গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্থিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
ইসরায়েল শুধু যুদ্ধবিরতির সাময়িক সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়ে গাজায় সব সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে এবং বলেছে যে এটি হামাসকে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত করতে বাধ্য করার জন্য তার সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করছে।