মূল্যায়নে ৭ মাস

মূল্যায়নে ৭ মাস যথেষ্ঠ নয়। কিন্তু এই সাত মাসে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে তার বিস্তারিত ইতি এবং নেতিবাচকতা তুলে ধরা হলো। আমাদের এই দেশে বারবারই সরকার পরিবর্তন হয় এবং হয়েছে আর হবে। কিন্তু এইবারের সরকার পরিবর্তন একটি ব্যতিক্রমী আয়োজনে হয়েছে। এই সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সমগ্র দেশবাসী জড়িত। কেউ কেউ প্রত্যক্ষ আর কেউ কেউ পরোক্ষভাবে জড়িত। তবে সবার সর্বাত্মক অংশগ্রহণে এই সরকারের বিদায় হয়েছিল যা গত ৫ আগষ্ট বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল। তবে ব্যতিক্রম ছিল এই আন্দোলন কোন রাজনৈতিক ব্যানারে ছিল না বরং ছিল আনকোড়া অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে যা পরবর্তীতে প্রমানিত হয়েছে তা ছিল পরিকল্পিত। তবে একটি নাম উচ্চারিত হয়েছিল আর তা ছিল ছাত্র আন্দোলন। ছাত্ররা নতুন আকর্ষনীয় নামে ভুষিত করেছিল ঐ আন্দোলনকে। যেমন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হয়েছে, বাংলার জনতা একীভূত হয়েছিল। যার প্রমান বার বারই প্রত্যক্ষ হয়েছে। ছাত্রদের ডাকে সাড়া দিয়ে বার বারই মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছে এবং পড়বে। তাই ছাত্রদেরও সাবধান হতে হবে নতুবা ভবিষ্যতে আর তাদের ডাকেও সাড়া পাওয়া যাবে না। মনে রাখতে হতে দিন দিন মানুষের অনুভুতি এবং সহানুভুতি আর দুরীভূত হয়। যেমন একটি সহজ উদাহরণ আমাদের শৈশবে কারফিউ শব্দটি শুনলে বা জারি হলে ঘর থেকে কেউ হতো না। শুধু শহরে তা কিন্তু নয় বরং সমগ্র দেশে: গ্রামে গঞ্জে, হাটে বাজারে, জনপদের অলীতে গলিতে সবই যেন স্তব্দ হয়ে জনশুন্য থাকত। কিন্তু আজ কারফিউ শব্দটি শুনলে জনমতে উৎসাহ ও উদ্দিপনা জাগে যে যার মত করে ঘর থেকে বের হয়ে কারফিউ দেখতে যায়। মাইকিং করেও ঐ উৎসুক জনতাকে ঘরে ফিরানো যায়না। তাই বলছি সাধু সাবধান।

আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন এখন আর তেমন প্রভাব ফেলে না। কারণ জনগণ বারংবার প্রতারিত হয়েছে রাজনীতিবিদ দ্বারা। তাই তাদের প্রতি বিশ্বাস ও আশা-আকাঙ্খা এখন -০ এর কোটায়। সুতরাং ছাত্ররাও আজ রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। কিন্তু জনপ্রত্যশা পূরণ না হলে সেই আগের রাজনৈতিক দলেরই মত প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ছাত্র এবং রাজনৈতিক দল এই দুয়ের মধ্য হাজারো ফারাক রয়েছে। তবে ছাত্র থেকে শিক্ষা ও দিক্ষা নিয়ে যদি স্বতস্ফুর্তভাবে শতভাগ আন্তরিকতার সহিত সৎভাবে জনআকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে কার্যকরভাবে অগ্রসর হলে হয়ত জনসয়লাভ আরেকটিবার প্রত্যক্ষ করা যাবে।

আত্মঅহমিকা, অহৎকার এবং গর্ব ও হামছেবড়া কনহে ভাবের পতনের পর নতুন সরকার হিসেবে সর্বশ্রদ্ধেয় ইউনুছ সাহেব এসেছেন এবং তার মত করে সাজিয়েছেন তার সরকারের সংসার। কিন্তু অনেক উন্নতি ও অবনতির দোলনচলে ধীরলয়ে এগুচ্ছে এই ইউনুছ সরকার। এই ধীরলয়ের কারণে বাংলার আকাশে কালো মেঘের ঘর্জন এবং তর্জন ও পেরেশানির বৈপ্লবিক বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে এই জাতি তথা দেশ ও দেশবাসী। সরকারের কর্মকান্ডে ধীরগতিতে পর্যবসীত হয়েছে এবং সঠিক কাজ সঠিক সময়ে সুসমাপ্ত হচ্ছে না। নতুন গঠনমূলক পদক্ষেপের ঘাটতি রয়েছে। উন্নিতির সোপানে দুস্তর ফারাক রয়েছে। বিনিয়োগ এবং ব্যাবসা বাণিজ্যে ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। চলমান উন্নয়নে স্থবিরতা নেমে এসেছে। অর্থনীতির নীতিতে কোঠারাঘাত লক্ষ করা যাচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসে দ্বার প্রান্তে এসে পৌছেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিরতা, শিক্ষার আলোক বর্তিকা ছাত্র এবং শিক্ষক সম্পর্ক দা কোড়ালে পর্যবসিত হচ্ছে। শিক্ষায় রাজনীতি ও পেটনিতি এমনকি ক্ষমতার ব্যবহার জড়িয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যত হাতছানি দিচ্ছে।

পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধনে বিচ্ছেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। শ্রদ্ধা এবং সম্মান দেয়া নেয়াতে বিলুপ্তির সুর বাজছে। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেয়ে অনৈক্য সৃষ্টিতে সকলে আশাবাদি হচ্ছে। সহিষ্ণুতা পরিহারে মানুষ উজ্জীবিত হচ্ছে। ঘোষ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং চাদাবাজিতে এমনকি তদবির বানিজ্যে সয়লাভ হচ্ছে বাংলার আনাচ-কানাচ। পরিপূর্ণ হচ্ছে অন্ধকারের অনিশ্চয়তার গন্তর্ব্য। ক্ষমতা কেন্দ্রীক মহড়ার আয়োজনের তোড়-জোর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষতিকর নেতিবাচকতার সয়লাভে পরিপূর্ণ হচ্ছে সমাজ, সংস্কৃতি এবং সংসার আর রাষ্ট্রীয় কাঠামো। যার  যার ইচ্ছানুযায়ী কথা বলছে আর পথ চলছে। তবে এতে মনে হচ্ছে জোড় যার মুল্লুক তার। আরো বলা যায় জোড় যার এখনই সময় তার। চুরি, ডাকাতি, খুণ-খারাবিতে চারিদিক সয়লাভ। শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের গর্জনে আকাশ -বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে। নির্যাতিতের আহাজারিতে এবং করুন আর্ত্মনাদে বাতাস ভারী হচ্ছে এবং চারিদিকের হুংকার ও ঝংকারের বিনা বাজছে। কিন্তু কান থেকেও যেন কেউ শুনছে না, চোখ থেকেও যেন কেউ দেখছে না। এই সকলই যেন এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার এবং যুগের চাহিদায় পরিণত হয়েছে।

আইন আদালত আছে কিন্তু পরিপালনে যেন কেউ নেই এই ভাব সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। আইনের রক্ষক এবং প্রয়োগকারীরা আজ বিলুপ্তীর দ্বারপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছে। কেউ তাদেরকে গুনছে এবং শুনছে এমনকি মানছেও না। প্রতিবাদে আর প্রতিঘাতে তারা নূয্যমান অবস্থায় পর্যবসীত হচ্ছে। সরকার এইদিকে কান দিচ্ছেনা অথবা কান দিয়েও কোন সুরাহা করতে পারছেনা এই ভাবটিই পরিলক্ষিত হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে শ্যাম রাখি না কূল রাখি এই অবস্থা যেন ত্রাহীসম ভাবে গন্তর্বের দিকে গড়াচ্ছে। কি আর করার মজলুম আম জনতার যত যন্ত্রণা। যা অতিতের ন্যায় বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্যও বিরাজমানই রইল। সাধারণের কোর্টে একটি মামলার তারিখ পেতে ঘুষ লাগে এমনকি তারিখ পাওয়া যায় না কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের আর ক্ষমতার কাছের মানুষজনের মামলা সকল সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে। এই হল হালচাল। তাহলে ন্যায্যতা কোথায়? আর মূখ্য বৈষ্যম্যের অবসান কি হলো? পূর্বের ন্যায় এখনও চলছে এবং চলবে কিন্তু সাধারন মানুষ ঐ একই  জায়গায় থেকে এই প্রবাদটির মতো নিষ্পেষিত হচ্ছে এবং হবে। প্রবাদটি হলো “শিলে পাটায় ঘষাঘষি  মাঝখানে মরিচের জীবন শেষ”। সবসময়েই এই আম জনতাই ছিল মরিচের দশায়।

আরো কতকি ঘটছে পর্দার অন্তরালে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। তা আরেকদিন বিস্তারিত আলোচনায় এনে করনীয় ঠিক বিষয়ক পাঠশালায় অগ্রসর হবো। তবে এই সরকারের ইতিবাচক দিকগুলোও বলা যায়। প্রথমত হলো অধিকার আদায়ে রাজপথে নামার সুযোগ এবং কতিপয় সমূহ দাবি পুরন হওয়া। আরো দাবি পূরণের সুযোগ’র বিস্তৃতি লাভ করা। আন্দোলন ও গণজাগরণে গুরুত্ব দেয়ার মনোভাব প্রকাশিত হওয়া। রমজানে বাজার ব্যবস্থায় একটি স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। বেপুরোয়া এবং অনৈতিক ব্যবসার জাল বিস্তার রোধ করা। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রমজানে স্থিতিশীল রাখা। আর জনবান্ধব কার্যকলাপে আন্তরিকভাবে অংশগ্রহন সুনিশ্চিতে কার্যকরভাবে এগিয়ে যেতে আপ্রাণ চেষ্টা করা। অর্থনীতিতে স্থিতিশীল হয়ে কার্যকর ভুমিকা নেয়া। বিদেশ নীতিতেও সামলিয়ে চলা নিতিতে অগ্রসর হয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়া। কারো কারো ব্যবহারিক বাক্যে পলাতক ফ্যাসিষ্ট মনোভাব প্রকাশিত হওয়া। ভুলে যাওয়া যেন চিরায়ত স্বাভাব। জনগণ ক্ষমতার মালিক এই কথা ভুলে নিজেই ক্ষমতার মালিক এবং ক্ষমতাধর হওয়া।

গত সাত মাসের মূল্যায়নে সরকারের পাল্লা ভারি না হয়ে হালকাই হলো। শেষ বিচারের দিন মুসলিম উম্মার সেই বিচারের পাল্লাও যেন নেকে হালকা আর পাপের ভারি হয়; সেই মতই সরকারের ইতিবাচকতার পাল্লা এখন নেতিবাচকতার পাল্লার চেয়ে তুলনায় হালকা। তবে ইউনূছ সরকারকে সময় দেয়া এবং সহযোগীতাই বড়ই অভাব দৃশ্যমান রয়েছে। যার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই অসহযোগীতা আজ নয় সর্বকালেই বিরাজমান ছিল এবং আছে ও থাকবে। এটাই রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ম এবং রাজনীতির কূটনীতি। তাই এইসকল মোকাবিলা করেই সামনে এগুতে হবে। তবে ভালকিছু করতে হলে সমালোচিত হতে হবে এবং সর্বাঙ্গীন মঙ্গল সাধনে ব্রতী হতে হলে সকলের মন রক্ষা করে চলা সম্ভব নয়। কারণ মানুষ কোনভাবেই সকলের মন রক্ষা করে চলতে পারে না। পারে শুধু সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু পর্যবেক্ষণ এবং পরিবেক্ষনে আর বাস্তবতার নিরীখে মনে হয় সৃষ্টিকর্তাও আজ সকলের মন রক্ষা করতে পারছে না। তাই সাবধান হয়ে আগামীর কর্মপন্থা ঠিক করুন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে পদক্ষেপ নিন এবং সফলতার নিশ্চয়তায় এগিয়ে যান। কে কি বলল এবং ভাবল এটা বিবেচ্য বিষয় নয় বরং বিবেচ্য বিষয় হলো সফলতা এবং সার্বজনীনতা। ন্যায় বিচার ও ন্যায্যতা আর ২৫’র বৈষম্যহীনতা। এই বলেই সংক্ষিপ্তাকের মূল্যায়নের সমাপ্তি টানলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.