লিভার ক্যান্সার শনাক্তে চীনা গবেষকের নেতৃত্বে নতুন প্রযুক্তি

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ চীন ও সিঙ্গাপুরের গবেষকরা যৌথভাবে লিভার ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি নির্ধারণে কার্যকর একটি স্কোরিং সিস্টেম তৈরি করেছেন। গত  বৃহস্পতিবার নেচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এই পদ্ধতির নির্ভুলতার হার ৮২ দশমিক ২ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নতুন পদ্ধতিটির নাম টিউমার ইমিউন মাইক্রোএনভায়রনমেন্ট স্পেশাল সিস্টেম বা সংক্ষেপে টাইমস। এটি বিশ্বের প্রথম টুল যা স্পেশাল ইমিউন তথ্য বিশ্লেষণ করে লিভার ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি নির্ধারণ করতে পারে।

গবেষণাটি নেতৃত্ব দিয়েছেন চীনের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক সুন ছেং।

হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (এইচসিসি) হলো লিভারের প্রধান কোষগুলোর মধ্যে দেখা দেওয়া সবচেয়ে সাধারণ লিভার ক্যান্সার। এটি সাধারণত লিভারের দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন সিরোসিস বা হেপাটাইটিস বি ও সি সংক্রমণ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।

অধ্যাপক সুন ছেং বলেন, ‘এইচসিসি বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ, যেখানে অস্ত্রোপচারের পর পুনরাবৃত্তির হার প্রায় ৭০ শতাংশ।’ তাই, নির্ভুলভাবে এ রোগ আবার দেখা দেওয়ার ঝুঁকি নির্ধারণ করা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং।

টাইমস পদ্ধতি

সুন ছেংয়ের দল আবিষ্কার করেন, ক্যান্সার টিস্যুর মধ্যে প্রতিরক্ষা কোষগুলোর অবস্থান রোগের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই তথ্য ব্যবহার করেই তারা নতুন মূল্যায়ন ব্যবস্থা তৈরি করেন।

গবেষকরা ৬১ জন রোগীর এইচসিসি টিস্যু বিশ্লেষণ করে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বায়োমার্কার শনাক্ত করেন। এসব বায়োমার্কার ও এআইভিত্তিক মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম একত্রিত করে টাইমস পদ্ধতি তৈরি করা হয়।

পরীক্ষামূলকভাবে ২৩১ জন রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হলে টাইমস-এর নির্ভুলতা পাওয়া যায় ৮২.২ শতাংশ। এটি প্রচলিত টিএনএম ও বিসিএলসি সিস্টেমের চেয়ে বেশি কার্যকর বলেও প্রমাণিত হয়েছে।

এ সিস্টেমকে সহজে ব্যবহারযোগ্য করতে, গবেষক দল একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছে, যেখানে চিকিৎসকরা স্ট্যান্ডার্ড প্যাথলজি ইমেজ বা তথ্য আপলোড করে রোগীর পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি নির্ধারণ করতে পারবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল লোৎজে গবেষণাটির প্রশংসা করে বলেন, ‘টাইমস কেবল লিভার ক্যান্সারই নয়, অন্যান্য কঠিন টিউমার গবেষণায়ও দিকনির্দেশনা দিতে পারে। এ পদ্ধতির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জিনগত কাঠামো বিশ্লেষণ করে ইমিউনোথেরাপির নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে, যা ক্যান্সার চিকিৎসায়ও বিপ্লব ঘটাতে পারে।’

সূত্র: সিএমজি

Leave a Reply

Your email address will not be published.