স্বাধীনতা আর ঈদানন্দ

স্বাধীনতা শব্দটি খুবই সুন্দর এবং আনন্দের। কিন্তু স্বাধীনতা ভোগবিহীন এই শব্দটির কোন মূল্য নেই। পৃথিবীতে আজ স্বাধীনতার জন্য হাহাকার। কিন্তু স্বাধীনতা পেয়েও মানুষ আজ স্বাধীন বলতে বা ভোগ করতে পারছে না। কোন কোন কারণে মানুষের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হচ্ছে। তবে যদি কেউ পৃথিবীতে স্বাধীনতা ভোগ করেছেন ক্ষণিকের জন্য তবে তার কাছে আমার প্রশ্ন আপনি কি বেহেস্তের স্বাধীনতা এবং এর অধিকার পেয়েছেন। নিশ্চিত হয়েছেন বেহেস্তে বসবাস করার। তবে যদি না হন তাহলে পৃথিবীর এই জৌলুসময় ক্ষণিকের স্বাধীনতা ভোগ করে কি লাভ? স্থায়ী আবাসস্থলের স্বাধীনতা এবং নিশ্চয়তাটুকু লাভের প্রত্যাশায় দুনিয়াবী এই লোভনীয় স্বাধীনতা ত্যাগ করাই কি উত্তম নয়?  পৃথিবীর এই স্বাধীনতায় রয়েছে জুলুম, অন্যায়, অন্যায্যতা, মিথ্যা, ঘৃণ্য এবং নেতিবাচকতা আরো কতো কি? যা এই সময়ে এসে সবই আমার এবং আপনার সামনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দৃশ্যমান।

কেউ কেউ আবার ক্ষণিকের স্বাধীনতা ভোগেরত থেকে হয়েছে বেপোরোয়া। গতিহীন চালচলন, লাগামহীন কথাবার্তা এবং নিজের স্বাথ্য ও লক্ষ্য হাসিলে নিজস্ব মনগড়া কথার ছলে চাপাবাজিরত। কথার কোন মিল নেই, সামাজিক মর্যাদা, ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক সামঞ্জস্যতার কোন মিল নেই। বরং কথার হিসেব না কষে গড়মিল বক্তব্য দিয়ে নিজেকে আরো ছোট করছে এবং লাগামহীন স্বাধীনতার সর্বনাশ ডেকে আনছে। তাই ঐসকল ভাইদের, বন্ধুদের, মুরুব্বীদের, সন্তানদের, বাবাদের, ছাত্রদেরসহ সকলকেই বিনীত অনুরোধ রাখছি যেন, কথা ও কাজের মিল রেখে চিন্তা ও কাজের সমন্বয় ঘটিয়ে অগ্রসর হউন। আগের কথা এবং পরের কথার মধ্যে মিল রাখুন এবং বেফাস কথা এমনকি হুমকি ও ধমকিমূলক কথা অথবা গোজামিলের জোরখাটানো কথা বন্ধ করুন। কারণ আপনাদেরকে অনেকেই অনুসরণ ও অনুকরণ করছে এমনকি আপনাদের আগে ও পিছের এবং সামনের বক্তব্যগুলোকে মিলিয়ে অথবা বিশ্লেষণ করে আগামীর করণীয় ঠিক করছে। তাই সাবধান হউন।

রাজনীতিবিদরাই গলদ। কারণ আজোও কোন রাজনীতিবিদ নিজেকে শতভাগ সত্যের উপর দাঁড়িয়ে জনতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেনি এবং অদূর ভবিষ্যতে পারবেও না। তবে রাজনীতিতে মিথ্যার ছড়াছড়ি এবং ক্ষমতার লোভে মাতোয়ারার মাতলামী এখনও বন্ধ হয়নি বরং বিভিন্ন কায়দায় রং মাখিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এইসকল জনগণের দৃষ্টিগোচর হয়েছে কি না  তা এখও প্রশ্নবোধক। তাই সৎ এবং আদর্শভিত্তিক রাজনীতিবিদ এর সন্ধানে দেশবাসী এমনকি বিশ্ববাসী অসহায়ের মত তাকিয়ে রয়েছে। তবে মাঝে মাঝে কারো কারো কথায় আশ্বস্ত হয়ে সকল কিছু উজাড় করার পরও মানুষ বারংবার প্রতারিত হয়ে এখন ঘরকোণে আবদ্ধ থেকে নতুনকে বা ত্রাতাকে খুজছে। তবে হযরত মূসার মত ত্রাতা আসবে কি? হযরত ঈসার মত পরোপকারী নিস্বার্থ এবং নিশর্ত সেবক আসবে কি? সেই আশায় মানুষ দিন গুনছে।

মুরুব্বীদেরকে বলছি ছাত্রদের রাজনীতিতে আসা নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ না করতে। বরং ইতিবাচকভাবে গঠনমূলক সমালোচনা করে তাদের ভুল থেকে বের করে আনার দায়িত্ব নিতে। আর ছাত্রদেরও বলছি; লাগামহীন না হয়ে ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালন করে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ন্যায় আচরণ করতে এমনকি মুরুব্বীদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা পোষণ করে আরো বিনয়ী হতে। কারণ স্বাধীনতা আমাদেরকে বিনয়ী হওয়া থেকে; অন্যকে প্রাধান্য দেয়া থেকে এমনকি সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্যতা থেকে দুরে ঠেলে দিচ্ছে। তাই সকলের প্রতি আমার আহবান “ যা সত্য যা উপযুক্ত যা সৎ যা খাঁটি যা সুন্দর যা সম্মান পাপার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য সেই দিকে তোমরা মন দাও।”

বর্তমানকে স্বীকার করে ভবিষ্যৎকে ঠিক করতে হবে। অতিত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সমন্বয় সাধনে একযোগে কাজ করতে হবে। পিছিয়ে পড়া থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ক্ষমা ও ভালবাসার আলিঙ্গনে সমাজ ও সংসার প্রতিস্থাপন করতে হবে। দেশ বিনির্মানে ক্ষমা ও ভালবাসার নি:শর্ত বন্ধন ছাড়া নতুন কোন ফমূলা ফল বয়ে আনতে পারে না বরং ক্ষমায় এবং ভালবাসায় সাজিয়ে তুলূন নতুন বাংলাদেশ। আসন্ন ঈদ আমাদেরকে এই শিক্ষায় এবং দিক্ষায় গড়ে তুলুক। ঈদের আনন্দে সকল শত্রুতা বিতাড়িত হউক। সকলে ভাই ভাই এই উপলব্ধিতে ফিরে আসি। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করি। কাউকে বিচার করার এখতিয়ার পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে দেয় নাই বরং নিজেকে বিচার করার এখতিয়ার দিয়েছে। তাই নিজেকে বিচার করি এবং সমস্ত বিচারের ভার সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিয়ে তাঁর ন্যায় বিচার দেখার প্রত্যাশা করি। তিনি ন্যায়বিচারক এবং পৃথিবীতেই তিনি সেই বিচার প্রত্যক্ষ করান। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে ধৈয্য ধরে অপেক্ষায় থাকি এবং ক্ষমা ও ভালবাসায় নিজেকে সাজিয়ে তুলি।

রমজানের তাৎপর্য এবং ঈদের আনন্দ উপভোগ্যের তাৎপর্য সঠিকভাবে পরিপালনে মনোযোগী হই। মুসলিম উম্মাহর ছায়াতলে পৃথিবীর সকল মানুষকে একতাবদ্ধ করে সৃষ্টিকর্তার গুনগান করি এবং সেই গুনগাণরতবস্থাতেই বেহেস্তে গমন করি। এই কামনা এবং বাসনায় সকলকে ঈদ মোবারক; ঈদ মোবারক। সালাম ও শুভেচ্ছা এবং ভালবাসা আর বেহেস্তি দাওয়াত দিয়ে আগামীর স্থায়ী স্বাধীনতা ভোগের আর চিরস্থায়ী আবাসের নিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যেতে সকলকে সবিনয় আহবান করছি। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহায় করুন এবং আপনার সান্নিদ্ধ্যে থাকার উত্তম ব্যবস্থা করুন। আপনার সুরক্ষায় রাখুন, নিরাপত্তায় রাখুন এবং আপনার পরিচালনায় পরিচালিত করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.