ঈদ ফেরত কর্মানন্দ

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আন্দন্দ শেষে এখন ঘরমুখো মানুষগুলো কর্মমুখরতার দিকে এগুচ্ছে। গ্রাম থেকে শহুরে ফিরে আসছে ঝাকে ঝাকে। ফাঁকা শরহ যেন আঁকতে উঠছে মানব এবং যান্ত্রীক জীবনের কোলাহলে। ঈদানন্দে এক স্বাস্তির নি:শ্বাস আর কর্মানন্দে আরেক স্বস্তির নি:শ্বাস এই দুইয়ে যেন এখন মানুষ মিলেমিশে একাকার। মানুষের এই ঘূর্ণায়মান জীবনে বহু রকম আনন্দের মধ্যেই ঘূর্ণায়মান থেকে সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে। এরই মাঝে আবার নানান প্রতিকুল পরিবেশের স্বিকার হচ্ছে এমনকি মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিকুলতাকে কাটায়ে কঠিন সংগ্রামে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।  এভাবেই সৃষ্টিলগ্ন থেকে দল-মতের উদ্ধে উঠে ধর্ম- বর্ণের বেড়াজাল ভেদ করে সার্বজনীন আনন্দগুলো মানুষ উদযাপন করে যাচ্ছে এবং যাবে। তবে এই আনন্দ উদযাপনে সব সময়ই একটি মলিনতা দৃশ্যমান থাকতো। তা আজো রয়েছে।

সেই মলিনতায় এখন দোসর হচ্ছে সদ্য বিদায়ী রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং স্বেচ্ছাচারি মনোভাবাপন্ন মানুষগুলো। অতীতেও দেখেছি এই মলিনতায় মিলেমিশে থাকতে এবং স্বীকারে পরিণত হওয়ারা হলো বিএনপি এবং জামাত ও তাদের নেতা এবং কর্মীরা। তাহলে আমাদের সমাজের ঐক্যবদ্ধতার জোয়ার কখন আসবে এবং কে নিয়ে আসবে? যেখানে কোন মলিনতার ছাপ থাকবে না  বরং থাকবে শুধু নির্মল ও নির্মোহ আনন্দ। জাতি বিভক্তিতে নয় বরং ঐক্যবদ্ধতায় আনন্দ উদযাপন করে সাম্যের গীতিবাদ্যে এগিয়ে যাবে। ইংরেজিতে যাকে বলে ইনক্লুসিভ জয় (সকলে মিলে আনন্দ)। আমরা সেই দিন দেখার আশায় দিন গুনছি।

ঈদ ফেরত মানুষগুলো যার যার কর্মে যোগদানের লক্ষ্যে গন্তর্ব্যে ফিরছে। এরই মধ্যে যানঝটমুক্ত এবং নিরাপদ জার্নি এ পর্যন্ত দৃশ্যমান রয়েছে। তবে কয়েকটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ছাড়া ঈদানন্দ এবং কর্মানন্দ ভালই সামলে চলছে। মানুষজন সেই আনন্দের রেস ধরেই আগামীর কঠিন ও কঠোর অর্থনৈতিক টানপোড়েন মোকাবিলায় মনোযোগ দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে বিশ্বমোড়লরা বা বিশ্ব ক্ষমতার অধিকারীরা ঘোষণা দিয়ে শুরু করেছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমরা যে স্বীকারে পরিণত হব তা কিন্তু নিশ্চিত। কারণ এই আমাদের অবস্থা হবে মরিচের মত। কথায় আছে শীলে পাটায় ঘষাঘষি মরিচের জীবন শেষ। তাই আমরা আজ সেই মরিচের মতই নির্বাক অত্যাচার শয্যকরে নি:শেষ হওয়ার পথে। হয়তো কেউ কেউ এই কষাঘাতের নিপিড়ন থেকে উতরে যেতে পারবে কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কি না তা নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবো না।

এই ত্রিধাভিবক্ত বিশ্বকে এক এবং অভিন্ন পথে ঐক্যবদ্ধ করণের লক্ষ্যে খোদার সহায়তা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। নতুবা বিভক্তির রোষানলে পড়ে ছাই হওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই। তাই আসুন ঈদানন্দের ধারাবাহিকতায় এবং সার্বজনীন কল্যাণের তরে সকলে মিলেমিশে (দল, মত, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র এবং উঁচু ও নিচু) দেশ ও নিজের এবং আগামীর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখি। যে যত ঐক্যবদ্ধ সে ততই শক্তিশালী এবং নিশ্চিত বিজয়ী। তাই সকলেই ঐক্যবদ্ধ হই এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়াতে মনযোগী হই। বিভেদের সুর পাল্টিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। অতিতের ইতিহাস এই স্বাক্ষী দেয় যে, জাতি যতবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ততবারই অনেক অসাধ্য বা অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করেছে। তাই জাতির ঐক্যবদ্ধতায় গুরুত্ব দিয়ে কর্ম সম্পাদন করুন এবং সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে এই মুলমন্ত্রে উজ্জ্বীবিত হউন। ক্ষমা ও ভালবাসার বিকল্প নেই। এই দুই শব্দ বা এর কার্যকারীতা যখন বিলীন হয়ে যাবে তখন পৃথিবীর অস্তিত্বই আর টিকে থাকবে না। তাই আগামীর পৃথিবীকে সুন্দর ও সুনিশ্চিত করতে চাইলে এই ক্ষমা ও ভালবাসাকে (নি:শর্ত এবং নি:স্বার্থ) পুনপ্রতিষ্ঠিত করুন। পৃথিবীকে বেহেস্তি রাজ্যের অবয়বে সাজিয়ে তুলুন। পৃথীবি থেকেই বেহেস্তের যাত্রা শুরু করুন। নিশ্চিত গন্তব্যে ফিরে যেতে যে নিশ্চয়তা প্রয়োজন সেটিকে হৃদয়ের আলিঙ্গনে আবদ্ধ করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এবং সকলকেই ক্ষমা এবং ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে আপনার ইচ্ছা ও অভিপ্রায় এবং আকাঙ্খা পরিপূর্ণ করুন। এইখানেই ঈদানন্দ ও কর্মানন্দ’র ধারাবাহিক যাত্রা অব্যাহত থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.