প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ভারতের লোকসভায় বিতর্কিত মুসলিম ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাসের প্রতিবাদে গত শুক্রবার কলকাতা, চেন্নাই ও আহমেদাবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। জুমার নামাজ শেষে মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রত্যাখ্যান’ ে¯্লাগান দেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।

কলকাতায় ‘জয়েন্ট ফোরাম ফর ওয়াকফ প্রোটেকশন’-এর ডাকে বিক্ষোভ হয়। বার্তা সংস্থা এএনআই-এর ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভস্থলে উন্মুক্ত স্থানে জমায়েত হয়ে বক্তারা বিলটির বিরোধিতা করেন। আহমেদাবাদে পরিস্থিতি বেশি উত্তপ্ত ছিল। পুলিশ সেখানে রাস্তায় অবস্থান নেওয়া বয়োজ্যেষ্ঠ বিক্ষোভকারীদের জোর করে সরানোর চেষ্টা করে। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর গুজরাট শাখার প্রধানসহ ৪০ জনকে আটক করা হয়।
চেন্নাইতে অভিনেতা বিজয়ের তামিলাগা ভেট্রি কাজাগাম (টিভিকে) রাজ্যব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেয়। চেন্নাই, কোয়েম্বাটুর ও তিরুচিরাপল্লীতে টিভিকে কর্মীরা ‘ওয়াকফ বিল প্রত্যাখ্যান’ ও ‘মুসলিমদের অধিকার কেড়ো না’ ে¯্লাগান দেন। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে দেখা হচ্ছে বিজয়কে। তিনি এই বিলকে ‘গণতন্ত্রবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
লখনউতেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (সেন্ট্রাল লখনউ) আশীষ শ্রীবাস্তব বলেন, আমরা সবাইকে বিলটি ভালোভাবে পড়ে মতামত দিতে বলেছি। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়মিত মনিটর করছি আমরা।
রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে বিক্ষোভ : পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর নির্বাচনের মুখে এই বিক্ষোভ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতোমধ্যে বলেছেন, তিনি রাজ্যের মুসলিমদের জমি হারাতে দেবেন না। বিজেপিকে দেশ বিভক্ত করার চেষ্টার অভিযোগ এনে তিনি বলেছেন, নতুন অ-বিজেপি সরকার কেন্দ্রে গঠিত হলে এই বিল বাতিল করা হবে।
বিক্ষোভকারীদের প্রধান উদ্বেগ, নতুন ওয়াকফ আইন প্রযোজ্য হলে তা বিদ্যমান সম্পত্তিগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু পার্লামেন্টে বলেছেন, আইনটি ভবিষ্যতের জন্য প্রযোজ্য হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও তাকে সমর্থন জানিয়েছেন।
বিতর্কিত ওয়াকফ বিল : মুসলিমদের ধর্মীয় ও দাতব্য সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণকারী ওয়াকফ আইনে বড় ধরনের সংশোধনী এনেছে এই বিল। প্রায় ২০ ঘণ্টার তর্ক-বিতর্কের পর লোকসভায় এটি পাস হয়। বিরোধীরা এটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দিলেও সরকারি দলগুলো একে ‘ঐতিহাসিক সংস্কার’ বলে অভিহিত করেছে।
বিলটি লোকসভায় ২৮৮-২৩২ এবং রাজ্যসভায় ১২৮-৯৫ ভোটে পাস হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলেই এটি আইনে পরিণত হবে।
বিলের মূল পরিবর্তনগুলো : রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে দুইজন অ-মুসলিম সদস্য নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দানকারীদের কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে অনুশীলনকারী মুসলিম হওয়ার প্রশংসাপত্র দিতে হবে।
মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধীদের আশঙ্কা, এই সংশোধনীর মাধ্যমে কেন্দ্র ওয়াকফ বোর্ডগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। তবে রিজিজু এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।
পার্লামেন্টে তীব্র বিতর্ক : কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া গান্ধী এই বিলকে সংবিধানের ওপর ‘স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, বিজেপি সমাজকে ‘স্থায়ীভাবে বিভক্ত’ রাখতে চায়। বিজেপি তার এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।
পার্লামেন্টে এই বিল নিয়ে তীব্র বাকবিতন্ডা হয়। রাজ্যসভায় রেকর্ড ১৭ ঘণ্টা ২ মিনিট এবং লোকসভায় ১২ ঘণ্টার বেশি আলোচনা হয়।