মার্কিন নতুন শুল্কনীতি ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক ঝুঁকি

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের একাধিক দেশের ওপর গত বুধবার (২ এপ্রিল) চড়া শুল্ক আরোপ করেছেন। তার দৃষ্টিতে পদক্ষেপটি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, দিনটিকে তিনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে অঙ্গীকার অনুযায়ী অর্থনৈতিক সংস্কার করতে না পারলে পুরো বিষয়টি রিপাবলিকানদের জন্য কঠিন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে এ দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মার্কিন উৎপাদন খাত পুনরুজ্জীবিত করা, সরবরাহ শৃঙ্খল (সাপ্লাই চেইন) পরিবর্তন করা এবং কারখানাগুলোকে দেশে ফিরিয়ে আনার যে লক্ষ্য ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা নির্ধারণ করেছেন, তা বাস্তবায়নে কয়েক বছর সময় প্রয়োজন হবে।

তবে আর্থিক সংস্কার চলাকালীন কয়েক বছর মানুষের জীবন তো আর থেমে থাকবে না। চড়া শুল্ক যদি দীর্ঘদিন বহাল থাকে, তবে জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। আবার চড়া শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় অন্য দেশগুলোও মার্কিন পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করবে। সব মিলিয়ে মার্কিন অর্থনীতি নিম্নমুখী যাত্রা শুরু হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সংস্কার কাজের সময় আর্থিক বিভিন্ন ঝুক্কিকে হাল্কাভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। কখনও বলেছেন, দেশ গড়তে হলে সবাইকে একটু কষ্ট সহ্য করতে হবে। তবে আগামী বছরের শেষ নাগাদ মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় ভুক্তভোগী মার্কিনিরা তার এইসব বাগাড়ম্বরে আশ্বস্ত থাকতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনও আভাস দিতে পারছেন না বিশ্লেষকরা।

বর্তমানে রিপাবলিকানরা সামান্য ব্যবধানে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট নিয়ন্ত্রণ করছে। শুল্কবিষয়ক ক্ষতির ফলে মধ্যবর্তী নির্বাচনে তারা এক বা উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। ফলে সে সময় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকলেও পার্লামেটে ডেমোক্র্যাটদের আধিপত্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের একজন কর্মকর্তা মাইক ডাবকে বলেছেন, ট্রাম্প না হয় অনেক কিছুই সামলে নিতে পারেন। কিন্তু তার শুল্ক নিয়ে পরিকল্পনা যদি সফল না হয়, তাহলে ২০২৬ সালের নভেম্বরে ব্যালট যুদ্ধের আঁচ সামলাতে পারবেন কিনা, বলা মুশকিল। প্রধান ইস্যু হচ্ছে, তার এসব আগ্রাসী পদক্ষেপের ফল পেতে কতদিন সময় প্রয়োজন হতে পারে, সেটা। কারণ তার কাছে মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য মাত্র ১৮ মাস সময় রয়েছে।

আমদানি পণ্যের ওপর চাপানো শুল্কের বোঝা দিনশেষে বইতে হবে সাধারণ ভোক্তাকেই। রয়টার্স/ ইপসোস পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ রিপাবলিকান সমর্থকসহ মোট ৭০ শতাংশ মার্কিনি আশঙ্কা করছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের মূল্য চড়া হয়ে উঠবে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, এই শুল্ক আরোপে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বরং বেশি হবে। এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন ৩১ শতাংশ মানুষ। বাকি ১৬ শতাংশ মানুষ মত প্রদানে বিরত থেকেছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়, নতুন শুল্কনীতির ফলে মার্কিন কর্মীরা লাভবান হবেন বলে তারা মনে করেন কিনা। মাত্র ৩১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন এই পদক্ষেপ মার্কিন কর্মীদের উপকারে আসবে। তবে এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন ৪৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

এখন সামনের দিনগুলোতে দেখার বিষয়, আগ্রাসী শুল্ক নীতি মার্কিন অর্থনীতির চাকার গতি কোনদিকে ঘোরায় আর ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তার কি প্রভাব পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.