প্রশান্তি ডেক্স ॥ সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে রাতেই ছবি তোলার কারণে আরেক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান। শুধু তাই নয়, সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ক্ষেপে গিয়ে ওই সাংবাদিককে বলেন, ‘মিডিয়া ছুটায় দেবো, চোনো আমাদের!’

গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ সীমান্তবর্তী দুই থানার ‘উপজেলার বাসিন্দা’ ও ‘দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন’ পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম সাদ্দামকে এমন হুমকি দেন এসপি। ওই সাংবাদিক নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে জেলা সদরের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এসপি। জেলায় যোগদানের প্রায় সাত মাস পর তিনি প্রথম সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সাংবাদিক সাদ্দাম বলেন, ‘চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের একটি গ্রামের লোকদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের লোকদের সংঘর্ষ হয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সক্রিয় সহায়তায় তা নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন কুড়িগ্রাম এসপি মাহফুজুর রহমান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিক সাদ্দাম বলেন, ‘উপজেলার রমনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমিও ঘটনাস্থলে যাই। সে সময় চিলমারী থানার ওসিসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আমি আমার মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলাম। হঠাৎ এসপি জিজ্ঞাসা করেন, “এই তুমি কে?” আমি নিজেকে মিডিয়াকর্মী পরিচয় দেই। সঙ্গে সঙ্গে এসপি ক্ষেপে যান। তার গানম্যানকে বলেন, “ওর মোবাইল কেড়ে নাও। মিডিয়া ছুটায় দেবো, চেনো আমাদের!” এরপর তার গানম্যান আমার মোবাইল নিয়ে ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে দেন।’
ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক আরও বলেন, ‘এসপি অত্যন্ত অ্যাগ্রেসিভ ছিলেন। মিডিয়াকর্মী পরিচয় দিতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তার এমন আচরণে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। একজন পুলিশ কর্মকর্তার আচরণ কেন এমন হবে? ওনার আপত্তি থাকলে উনি আমাকে ছবি তুলতে বারণ করতে পারতেন। আমি তুলতাম না।’
এসপির রোষানলের শিকার এই সাংবাদিক আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী হয়ে যদি ছবি তুলতেও না পারি তাহলে কাজ করবো কীভাবে? এসপির কথাবার্তায় মনে হলো তিনি সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকে সহ্য করতে পারেন না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি বিষয়টি নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দিতে পারি।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা বলেন, ‘আমি কিছুটা দূরে ছিলাম। এসপি কখন এমন আচরণ করেছেন আমি বুঝতে পারিনি। পরে সাদ্দামের মন খারাপ দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করি। তখন সে আমাকে ঘটনা জানায়। এর বেশি কিছু জানি না।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে চিলমারী মডেল থানার ওসি আব্দুর রহিম বলেন, ‘ঠিক ক্ষিপ্ত না। স্যারতো কাউকে চেনেন না। স্যার জিজ্ঞাসা করছিলেন কে ভিডিও করে। তখন বলছেন যে রাতে ভিডিও করো না, এটুকুই। আরতো কিছু হয়নি।’
এদিকে এসপির এমন আচরণে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার সাংবাদিকরা। তারা এমন আচরণ ও মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে এসপিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
চিলমারী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সাওরাত হোসেন সোহেল বলেন, ‘এসপির এমন আচরণ সব গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের অপমানের শামিল। আমরা এ নিয়ে ফোরামের পক্ষ থেকে মিটিং করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছি।’
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান টিউটর বলেন, ‘সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন আচরণ শুভকর নয়। সাংবাদিক তার দায়িত্ব পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিক এসপির চাকরি করেন না। তিনি সাংবাদিকতা বা মিডিয়া ছুটায় দেওয়ার কে? তিনি কার টাকায় বেতন পান? সাংবাদিক কিংবা জনগণের সঙ্গে তার এমন আচরণ করার অধিকার নাই। এ জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে এসপি মাহফুজুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল ও মেসেজ বার্তা দিলেও তিনি জবাব দেননি।