প্রশান্তি ডেক্স ॥ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংস্কার প্রস্তাব সম্পর্কিত নিজেদের মতামত জমা দিয়েছে দলটির মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আলী আকন, যুগ্ম-মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম এবং সহকারী মহাসচিব আহমদ আবদুল কাইয়ুম।
সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।
উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কমিশন মতামত পেয়েছে।
সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি এবং নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাসদ এবং জাকের পার্টির সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে৷
ইসলামী আন্দোলন জানিয়েছে, মোট ১৮২টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪৫টি প্রস্তাবে একমত, ২৬টিতে দ্বিমত, ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং মৌলিক প্রস্তাব ৪টি দিয়েছে দলটি।
দলটির নেতারা জানান, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি করে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি এবং ভবিষ্যৎ স্বৈরতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করার জন্য সহায়ক প্রস্তাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একমত পোষণ করেছে এবং প্রয়োজনীয় নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রস্তাবিত সংস্কারের বেশিরভাগের সঙ্গেই একমত পোষণ করেছে। বিশেষ করে সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, একই ব্যক্তি দল, সরকার ও সংসদ প্রধান না থাকা, ৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তির মতো প্রস্তাব, যা ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্র মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে, তাতে ঐকমত্য পোষণ করেছে।
রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন একমত, তবে রাষ্ট্রের নাম হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ যা বাংলায় ‘বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র’। কারণ এই নামের মধ্যেই জনকল্যাণ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।
বিচার বিভাগীয় ২৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ২১টির সঙ্গেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একমত পোষণ করেছে। এর বাইরে শরিয়াহ আদালত স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং প্রমাণিত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সম্মতিকে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন বিষয়ে প্রস্তাবিত মোট ২৬টি সংস্কারের মধ্যে ১২টিতে একমত পোষণ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ৯টি প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। আর ৫টির সঙ্গে আংশিক একমত পোষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ করে প্রাদেশিক ও সিটি গভর্নমেন্ট প্রস্তাবের সঙ্গে এবং মেম্বারদের ভোটে চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট সংশোধনের বদলে পুরো বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগে মন্ত্রিপরিষদ কমিটিরও বিরোধিতা করা হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬১টি প্রস্তাবে একমত, ৩টিতে একমত পোষণ করা হয়নি। ৬টিতে আংশিক একমত পোষণ করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাব এবং মন্তব্য যুক্ত করা হয়েছে ১১টি ও মৌলিক প্রস্তাব ৪টি। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ২৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ২১টি প্রস্তাবে একমত, দুটিতে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১২টি প্রস্তাবে একমত, ৯টিতে একমত পোষণ করা হয়নি। একটি বিশেষ মূল্যায়নসহ ১৩টি নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের ২৭টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৮টি প্রস্তাবে একমত, ৯টি প্রস্তাবে একমত পোষণ করা হয়নি। নতুন প্রস্তাবনা যুক্ত করা হয়েছে একটি।
দুদক সংস্কার কমিশনের ২১টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৮টি প্রস্তাবে একমত, ৩টি একমত পোষণ করা হয়নি। প্রস্তাবনা ৫টি ও সুপারিশ যুক্ত করা হয়েছে তিনটি।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৫টি প্রস্তাবের সবগুলোতেই একমত পোষণ করা হয়েছে।