প্রশান্তি ডেক্স ॥ ছয়দফা দাবিতে আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে শিক্ষার্থীরা জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্তে তারা সন্তুষ্ট নন। তারা কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেলা ৩টার দিকে বেরিয়ে তারা এ ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের বৈঠক করার জন্য ডেকে আনা হয়। কিন্তু একজন অতিরিক্ত সচিব বৈঠক করেছেন। আমাদের দাবি-দাওয়া লিখে নিয়ে সচিবের কাছে উপস্থাপন করবেন, তারপর উপদেষ্টার কাছে দেবেন। আমরা চেয়েছিলাম উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের আন্দোলন বর্তমানে শিথিল আছে। কিন্তু আমরা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠকে বসে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ১৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
ছয়দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকাসহ সারা দেশে রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই শিক্ষার্থীরা। তবে সচিবালয়ে বৈঠকের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ‘রেলপথ ব্লকেড’ কর্মসূচি শিথিল করেন।
এর আগে গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) দিনভর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সারা দেশে পলিটেকনিকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো: ১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে ‘রাতের আঁধারে’ নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনও বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।