কাশ্মীরে হামলা: পাকিস্থানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনছে ভারত

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে বাইসরান উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার একদিন পর পাকিস্থানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হ্রাস করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। ২৬ জনকে হত্যার ওই ঘটনাকে ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বেসামরিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির এক বিশেষ বৈঠকে হামলার পেছনে ‘সীমান্ত পারের সংযোগ’ পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্থান সিন্ধু নদী ও তার উপনদীগুলোর পানি ভাগাভাগি করে। অবিলম্বে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হবে।

এছাড়া দিল্লিতে পাকিস্থান হাইকমিশনে কর্মরত প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে বলেও জানান তিনি।

মিশি বলেন, ভারত-পাকিস্থান সীমান্তের প্রধান চেকপোস্ট তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বিশেষ ভিসা ছাড়া কোনও পাকিস্থানি নাগরিক ভারত সফর করতে পারবেন না।

পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবারের ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক ছিলেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭ জন। হামলাটি ভারতের হিমালয় অঞ্চলের কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র বাইসরানে ঘটে।

২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর এটিই ভারতের বেসামরিক জনগণের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ভারতের দাবি, কাশ্মীরে ‘স্বাভাবিকতা’ ফিরে এসেছে এবং সন্ত্রাসবাদ প্রায় নির্মূল হয়েছে। কিন্তু এই হামলা সে চিত্রকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছে।

‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামের একটি প্রায় অপরিচিত জঙ্গিগোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করে এক বার্তায় জানিয়েছে, কাশ্মীরে ৮৫ হাজারের বেশি ‘বহিরাগত’ বসতি স্থাপন করায় জনমিতিক পরিবর্তন ঘটছে, যার প্রতিবাদেই তারা এই হামলা চালিয়েছে।

ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বলছে, ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ আসলে পাকিস্থানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা ও হিজবুল মুজাহিদিনের একটি ছদ্মবেশী শাখা।

পাকিস্থান অবশ্য সব ধরনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কেবল কাশ্মীরের জনগণের ন্যায় সঙ্গত ‘রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক’ সমর্থন দেয়।

এই হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যকার উত্তেজনা আবারও চরমে উঠেছে বলে বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠক ডেকেছেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের নীতি জিরো টলারেন্স এবং এর জবাব খুব শিগগিরই দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.