কাশ্মীর নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে অস্বস্তিতে ভারত

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি অপ্রকাশিত নীতিগত বিধিনিষেধ রয়েছে। আর তা হলো, কাশ্মীর ইস্যুতে কোনও তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা তারা মেনে নেবে না। সেই সূত্রেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য যেন এক অস্বস্তিকর বাস্তবতা তুলে ধরেছে ভারতের সামনে। তবে এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে পাকিস্থান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ভারত ও পাকিস্থান একটি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। মধ্যস্থতায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরে তিনি আরও লিখেছেন, আমি তোমাদের দু’দেশের সঙ্গে কাজ করব, যদি হাজার বছরের বিরোধের পরে কাশ্মীর ইস্যুতে একটি সমাধানে পৌঁছানো যায়।

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্থানের বিরোধের ইতিহাস ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় থেকেই। অঞ্চলটির সম্পূর্ণ মালিকানা দুই দেশই দাবি করে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করে আংশিক। কয়েক দশকের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি এবং ভারত বরাবরই কাশ্মীরকে নিজের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দাবি করে।

২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা (অনুচ্ছেদ ৩৭০) প্রত্যাহারের পর ভারতের অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে। এই পটভূমিতে ট্রাম্পের মন্তব্যকে ভারতের বহু বিশ্লেষক ‘কাশ্মীর ইস্যুর আন্তর্জাতিকীকরণ’ হিসেবে দেখছেন।

সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্থানের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের চার দিনের উত্তেজনার পর যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। এই সংঘাতে উভয় পক্ষ সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করছিল।

যদিও মার্কিন মধ্যস্থতা সংঘর্ষের ব্যাপকতা কমাতে সহায়ক হয়েছে, তবে ট্রাম্পের কাশ্মীর নিয়ে সরাসরি মন্তব্য দিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম সরণ বিবিসিকে বলেছেন, এই ধরনের প্রস্তাব ভারত সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে অগ্রহণযোগ্য। এটি আমাদের বহুদিনের অবস্থানের পরিপন্থি।

অন্যদিকে, ইসলামাবাদ ট্রাম্পের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে। পাকিস্থানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কাশ্মীর ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সদিচ্ছা আমরা প্রশংসা করি। দক্ষিণ এশিয়া এবং এর বাইরেও শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

পাকিস্থানের বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন, উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাবে পাকিস্থান সবসময় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার পক্ষে থেকেছে। এখন যখন একটি মহাশক্তি সামনে এসেছে, এটি পাকিস্থানের জন্য নৈতিক জয়।

ভারতের মূল বিরোধী দল কংগ্রেস সরকারকে ব্যাখ্যার দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, আমরা জানতে চাই, তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার দরজা কি খুলে দেওয়া হয়েছে? দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা কি আবারও চালু হচ্ছে?

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, দুই দেশ একটি নিরপেক্ষ স্থানে ‘বিস্তৃত ইস্যু’ নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। এ ঘোষণায় দিল্লি হতবাক।

ভারত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত বরাবরই কঠোর ও আপসহীন অবস্থান নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা বজায় রাখবে।

গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের সম্পর্ক গভীর হয়েছে। বিশেষ করে, ভারত এখন কোয়াড জোটের (যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সঙ্গে) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে এবং এখন দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য ১৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তবে অতীতের মার্কিন প্রাসন কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিত, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে সেই অবস্থান স্পষ্ট নয়। একদিকে ভারত ট্রাম্পের প্রস্তাবকে এড়িয়ে চলতে চায়, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনুকূল বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখাও চায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.